দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

1
Spread the love

করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউনে পড়ে যায় এবং স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১০০ কোটির অধিক শিশুর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে পড়ে। এই শিশু শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি চীনে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এরপর ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ। শিশুদের অধিকার ও কল্যাণ বিষয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এ বিষয়ে একটি প্রতিবদেন প্রকাশ করেছে। সারাবিশ্বের প্রায় এক কোটি শিশু পুনরায় স্কুলে ফিরে আসতে না পারার ঝুঁকিতে পড়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। সেভ দ্য চিলড্রেন আরও জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর উপর করোনা সংকটের কারণে অর্থনৈতিক প্রভাব শিশুদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে বাধ্য করতে পারে। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই বাল্যবিয়ের হুমকির মুখোমুখি। ওই সংস্থার জরিপ হয়তো শিক্ষা পরিস্থিতির একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেছে। আমরা যদি আমাদের চারপাশে একটু খেয়াল করি, তাহলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও পরিষ্কার হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে করোনাকালে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতিবাচক পরিস্থিতি, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও তাদের মানসিক অবস্থা নিয়ে নানা বিষয় উঠে এসেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বেতন না পেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাড়া, ইউটিলিট বিল ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ নানা বিষয় অমিমাংসিত হয়ে নানা সংঘাতমুখি অবস্থা তৈরি করেছে। অনলাইন কাসের নামে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোনোরকমে টিকিয়ে রাখার যে চেষ্টা, তা নিয়েও নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। করোনাকালে সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস সেক্টরসহ নানা খাতের জন্য প্রণোদনাসহ নানা আর্থিক সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যবসায়িক মডেলে পড়ে না, তাই সঙ্কটকালীন সময়ে তাদের ব্যাংক ঋণ বা আর্থিক সাহায্যের সুযোগও একেবারেই নেই বললেই চলে। সেজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তা বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। করোনাকাল হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীই হয়তো তার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর ফিরে যেতে পারবে না। হোক তা পারিবারিক সমস্যায়, নয়তো প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে। শিক্ষা জাতির মেরুদ-। দেশ জাতির ভবিষ্যতের কল্যাণে করোনাকালে শিক্ষাকে সঠিক ধারায় বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশি। এছাড়া সামাজিক ও বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক নানা উদ্যোগ-সহায়তাও প্রয়োজন এই ক্রান্তিকালে। বিশেষজ্ঞগণ ও দায়িত্বশীল নানা কর্তৃপক্ষ বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত সঙ্কট অনুধাবন করে এই বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেবেন বলে আমাদের আশাবাদ।