শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
আসাদুল শিকদার (৩১) উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক হাবিবুর রহমানের ছেলে। পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে খুব বেশি পড়ালেখা হয়নি তার। ২০০৭ সালে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. পাশ করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত দু’ বছর ধরে অফিস সহকারীর পদে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন আসাদুল। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে আশ্বস্ত করেন ওই পদে লোক নেয়া হলে তাকেই নিয়োগ দেয়া হবে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে এতে আসাদুলের সহ ৯টি আবেদন জমা পড়ে। তখন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবিদুর সহ চর্তুথ শ্রেনীর কর্মচারী জাফর হোসেনের মাধ্যমে আসাদুলের কাছে স্কুলের ওই পদে নিয়োগের জন্য ৫লাখ টাকা ঘুষের প্রস্তাব পাঠান। তাই নিজের একটি স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরীর জন্য আসাদুল তার বৃদ্ধ পিতার হাতে পায়ে ধরে ফসলী ১০কাঠা জমি সহ বসত বাড়ীর বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ বিক্রি করেন এবং সুদ সহ ধার দেনার মাধ্যমে ৫লাখ টাকা জোগাড় করেন।
পরে নিয়োগ পরীক্ষার ৪দিন আগে উক্ত টাকা থেকে প্রধান শিক্ষককে খরচ বাবদ ১ লাখ টাকা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেন আসাদুল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অন্য প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করেন এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে কমিটির অন্য সদস্যদের বিষয়টি অবগত না করে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের মাধ্যমে গত ৬ জুলাই সর্বোচ্চ ঘুষ প্রদানকারী ওই প্রার্থীকে নিয়োগ দেন। আসাদুল বলেন, হেড় স্যারের কথা অনুযায়ী ধার-কর্য করে টাকা জোগাড় করি, তার নির্দেশে শিক্ষা অফিসারকে আইড়িয়াল স্কুলের সামনে বসে একদিন সন্ধ্যায় নগদ ৫০হাজার টাকা দেই। জমিজমা বিক্রি করেও চাকরী পেলাম না, ওই স্কুলের হেড স্যার আমার সাথে এত বড় প্রতারনা করবেন, বুঝলে ঝুঁকি নিতাম না।
এখন পরিবার পরিজন নিয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়া ব্যাতীত অন্য কোন পথ খোলা নাই বলে হতাশা ব্যক্ত করেন আসাদুল। অপরদিকে, নিয়োগে নানা অনিয়মের ঘটনায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ৫জন সদস্য গত ৭জুলাই একযোগে পদত্যাগ করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সহ বঞ্চিত প্রার্থীরা বির্তকিত ওই নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি জানান। এব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ কামাল বয়াতী, জালাল ফরাজী, শাহাজাদা, মুজিবর রহমান ও আঃ সবুর গাজী সহ অনেকে বলেন, উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা মোঃ শহিদুল ইসলাম আকন, ২০১৭ সালে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন।
গত ৩ বছর ধরে কোন হিসাব না দেয়া সহ স্কুলের কয়েক লাখ টাকার গাছ বিক্রি করে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেন। অভিযোগকারীরা স্বচ্ছ নিয়োগ সহ নুতন ম্যানেজিং কমিটি গঠনের দাবী জানান। তবে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ কাল্পনিক দাবী করে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় বিপদগামী সদস্যরা একজোট হয়ে আসাদুলকে ব্যবহার করে নানা মুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন এবং তিনি কাউকে নিয়োগ দেননি। এছাড়া স্কুলের বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়োগ দেয়ার মালিক সে। তাই এখানে কোন অনিয়ম হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আপনারা ইউএনওর কাছে জানতে পারেন বলে মন্তব্য করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান খান বলেন, ঘুষ সহ অনিয়মের বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব, এখানে যোগ্য প্রার্থীকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি । তবে, কেউ কোন অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করে থাকলে প্রমান সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।