ঢাকা অফিস
করোনা দূর্যোগে টানা দুইমাস যান চলাচল সীমিত ছিল। জুনে এটি শিথিল করায় বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯৭টি, এতে নিহত হয়েছেন ৩৬১ জন এবং আহত ৩৪৮ জন। নিহতের মধ্যে ৫৭ জন নারী ও ৩২ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। রোববার (৫ জুলাই) সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দেশের সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করে সংগঠনটি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী গত মাসে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ১০৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৪জন, যা মোট নিহতের ৩৪.৬৮ শতাংশ। গেল মাসে দুর্ঘটনায় ৭৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.০৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১৩.৫৭ শতাংশ।
জুন মাসে ১১টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৫৬ জন নিহত ও ২৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। ৬টি রেল দুর্ঘটনায় নিহত ৭ জন। দুর্ঘটনায় ট্রাক যাত্রী ২৩, বাস যাত্রী ১২, পিকআপ যাত্রী ১০, কাভার্ডভ্যান যাত্রী ২, মাইক্রোবাস যাত্রী ৯, প্রাইভেটকার যাত্রী ১১, এ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ৪, লরি যাত্রী ৩, সিএনজি যাত্রী ১২, ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী ৩৫, নসিমন-করিমন যাত্রী ২৩, ভটভটি-আলমসাধু যাত্রী ২৫, রিকশা ও রিকশাভ্যান যাত্রী ১৬, এবং বাই-সাইকেল আরোহী ৬ জন নিহত হয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে ৮ জন শিক্ষক, ১ জন শিক্ষা কর্মকর্তা, ১ জন প্রকৌশলী, ২ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ১ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন গ্রামপুলিশ সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার, ২ জন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ৪ জন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, ২ জন ব্যাংকার, ৭ জন স্থানীয় ব্যবসায়ী, ৯ জন পোশাক শ্রমিক, ৩ জন এনজিও কর্মী, ১১ জন সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবী এবং ৪৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩১টি (৪৪.১০%) জাতীয় মহাসড়কে, ৯২টি (৩০.৯৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি (১৭.৮৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ২১টি (৭.০৭%)শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ৬৩টি (২১.২১%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮৮টি (২৯.৬২%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭৮টি (২৬.২৬%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা, ৫৯টি (১৯.৮৬%) যানবাহনের পেছনে আঘাত এবং ৯টি (৩.০৩%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৮.৭৪ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৪.৪২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জীপ-এ্যাম্বুলেন্স ৪.৬৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৭.১২ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৫.৩০ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা) ৯.৫৮ শতাংশ, নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু ১২.৫৩ শতাংশ, রিকশা-বাইসাইকেল ৫.৬৫ শতাংশ এবং অন্যান্য (টমটম-পাওয়ারটিলার, ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি) ১.৪৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪০৭টি। (ট্রাক ৮১, বাস ২৯, কাভার্ডভ্যান ১৩, পিকআপ ২২, লরি ৬, ট্রলি ৭, ট্রাক্টর ৬, মাইক্রোবাস ৬, প্রাইভেটকার ৯, এ্যাম্বুলেন্স ৩, বিজিবি’র পিকআপ ১, আনছার ব্যাটেলিয়ান জীপ ১, পোশাক শ্রমিক বহনকারী বাস ১, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাস ১, পাওয়ারটিলার ১, ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি ১, মোটরসাইকেল ১০৩, বাই-সাইকেল ৬, নসিমন-করিমন ২৪, ভটভটি-আলমসাধু ২৭, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা ৩৯, টমটম ৩ এবং রিকশা ১৭টি।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৭.৪০%, সকালে ২৮.৬১%, দুপুরে ২২.৫৫%, বিকালে ১৭.৮৪%, সন্ধ্যায় ৮.৭৫% এবং রাতে ১৪.৮১%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে ২১.৫৪%, রাজশাহী বিভাগে ২০.৫৩%, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪.৪৭%, খুলনা বিভাগে ১০.৭৭%, বরিশাল বিভাগে ১০.৪৩%, সিলেট বিভাগে ৩.৭০%, রংপুর বিভাগে ১০.১০% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮.৪১% দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ৬৪টি দুর্ঘটনায় ৮১জন নিহত। কম সিলেট বিভাগে। ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৫টি দুর্ঘটনায় ২১জন নিহত। সবচেয়ে কম পিরোজপুরে। ১টি দুর্ঘটনায় নিহত ১জন।