শেখ সেকেন্দার আলী, মালয়েশিয়া:
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ মালয়েশিয়া অবৈধ অভিবাসীদের জন্য নয় বলে জানালেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়াও বৈধ ভাবে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ নয় বৈধ বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন। আজ সোমবার (৬ জুলাই) দেশটির সিনিয়র মন্ত্রী (প্রতিরক্ষা) দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব ও স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জায়নুদ্দিন পৃথক পৃথক অনুষ্টানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন ।
স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জায়নুদ্দিন বলেন, প্রথমে দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা এবং যারা মালয়েশিয়ায় থাকেন তারা দেশটির আইন সঠিকভাবে মেনে চলছে কি না তা নিশ্চিত করা। এর মানে এই নয় যে আমরা বিদেশি কর্মী চাই না ।
আমাদের ভারী শিল্প বিকাশে নিবন্ধিত বৈধ বিদেশি শ্রমিকদের প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করা। আমাদের সকল কর্মের উদ্দেশ্য দেশের জনগন কি চায় তাদের চাওয়া বাস্তবায়ন করা।
সোমবার সকালে পোর্ট ক্লাং এমএমইএ মালয়েশিয়ার উপকূলের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক কোস্টগার্ডের মান উন্নত করার জন্য সরকারের উদ্যোগে দুটি নতুন টহল নৌকা গ্রহণের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হামজাহ জয়নুদ্দিন স্থানীয় গণমাধ্যমের সাথে এসব কথা বলেন।
অতি সম্প্রতি কাতার ভিওিক আল-জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলে লকডাউন সময়ে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বিদেশি শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য মূলক আচরণ এবং তাদের মারধর করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে ইতিমধ্যেই মালয়েশিয়ায় চলছে ব্যাপক তোলপাড়।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিদেশী গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। সুতরাং, বিদেশী গণমাধ্যম যদি বলে যে আমরা খুব কঠোর, তাহলে আমরা বলবো দেশের জনগণ যা চায় আমরা তাই করি। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় এমন একটি সরকার যা আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করি এবং তাদের পরিচালনা করি। এক্ষেত্রে শুধু আইন অনুসরণ করা হয়েছে।
এ দিকে সিনিয়র মন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাকে চ্যালেঞ্জ ছড়েছেন, দেশটিতে আটককৃত অবৈধ বিদেশীদের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়েছে তার প্রমাণ করতে হবে।
সিনিয়র মন্ত্রী বলেন,বিশ্বের কোনও দেশ অবৈধ প্রবেশের অধিকারী ব্যক্তিদের সেই দেশে অবাধে চলাচল করতে অনুমতি দেবে না।
বিদেশী বা স্থানীয়, যারা নিয়ন্ত্রণ আদেশের (আরএমসিও) অধীনে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) আইন ভঙ্গ করার কারণে আটক করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের সঙ্গে খারাপ আচরন করা হয়নি।
“আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, শিশুদেরও আটক কেন্দ্রে আটক করা হয়েছিল, এটি সত্য নয়। বাচ্চাদের বিশেষ কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল এবং অন্য আটককৃতদের সাথে মিশানো হয়নি।
“ইমিগ্রেশন বিভাগ ইমিগ্রেশন আইন ব্যবহার করে। যাদের কাছে আইনী দলিল নেই বা পুরোপুরি আমাদের দেশে থাকার জন্য কোনও দলিল নেই তাদেরকে আটক করা।
“আমরা আল জাজিরাকে আমাদের জানাতে বলব, পৃথিবীর কোন দেশ বিদেশী যাদের কাছে আইনী দলিল নেই তাদের দেশে অবাধে চলাচল করতে দেয়।
“আমি আল জাজিরাকে চ্যালেঞ্জ জানাই আমাদের দেখানোর জন্য, কিন্তু আমার কাছে উত্তরটি কিছুই নেই। তবে সম্ভবত আল জাজিরার কাছে দেশগুলির তালিকা রয়েছে এবং দয়া করে আমাদের দেখান। “তিনি সোমবার পুত্রজায়ায় কোভিড-১৯ এর প্রতিদিনের আপডেট সংবাদ সম্মেলনের সময় স্থানিয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন।
তিনি আরোও বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রবেশকারী বিদেশীদের ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট থাকতে হবে এবং তাদের ভিসা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তাদের অবশ্যই দলিলটি উপস্থাপন করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, কোভিড -১৯ পরীক্ষা করা হলে বিদেশি ও মালয়েশিয়ানদের একই আচরণ করা হয়েছিল এবং আইনী নথি সম্বলিত ৬৮,০০০ এরও বেশি বিদেশী কর্মচারীর স্ক্রিন করা হয়েছে, এর মধ্যে ২ হাজারেরও বেশি পরীক্ষিত কোভিড -১৯ ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
“কোভিড -১৯ এর ইতিবাচক পাওয়া যায় তাদের হাসপাতালে চিকিত্সা করা হয়। আইনী দলিলবিহীনদের জন্য, আমরা তাদের অসুস্থ রাখি না তবে তাদের স্ক্রীন করতে এবং তাদের আটকে রাখার কেন্দ্রগুলিতে রাখতে সহায়তা করা হয়। এ ক্ষেত্রে “মোট ৪,৯২৪ জন অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের স্ক্রিন করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৭৭৭ জন ইতিবাচক পরীক্ষা করেছেন। তারা সার্ডাংয়ের বিশেষ কেন্দ্রে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পরে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হবে।
ইসমাইল সাবরি জোর দিয়ে বলেন, কোভিড -১৯ এর জন্য নেতিবাচক পরীক্ষিত বিদেশী শ্রমিকদের দেশে অবাধে চলাচল করতে দেওয়া হবে না।
“তবে আমি বিশ্বাস করি আল জাজিরা তথ্যে আগ্রহী নন কারণ তারা মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করেছে। তারা আমাদেরকে বর্ণবাদী এবং এ-সমস্ত কিছুর জন্য অভিযুক্ত করেছে।
“সিনিয়রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, আন্তর্জাতিক এই সংবাদ সংস্থাটি কাজের নৈতিকতা ধরে রাখবে এবং সম্ভব হলে মালয়েশিয়ানদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। এদিকে মালয়েশিয়ায় কল কারখানাগুলোতে চাহিদা বাড়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান সে দেশের মালিকদের সংগঠন। চলতি বছর পর্যন্ত মালয়েশিয়া নতুন শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।