মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :
যশোরের মণিরামপুরে আসমা খাতুন (১৯) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, আসমার স্বামী হাবিবুল্লাহ তাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ বারান্দায় ফেলে পালিয়ে গেছে। একই সাথে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে হাবিবুল্লাহর মা শাহানাজ বেগম ও পিতা মাজিদ ফকির।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (৫ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে।
আসমা কেশবপুর উপজেলার আড়ুয়া গ্রামের মুনসুর আলীর মেয়ে। মাত্র এক বছর আগে গোবিন্দপুরের হাবিবুল্লাহর সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে হাবিবুল্লাহ ও তার মা আসমাকে নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ আসমার স্বজনদের।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকালে আসমা ঘর লেপার কাজ করছিলো। কাজ পছন্দ না হওয়ায় তার স্বামী তাকে মারপিট করে। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে আসমার গলায় ওড়না জড়িয়ে ঘরের আড়ার সাথে তাকে ঝুলিয়ে দেন স্বামী হাবিবুল্লাহ। পরে হাবিবুল্লাহ নিজেই লাশ নামিয়ে এনে ঘরের বারান্দায় রেখে পালিয়ে যান। সন্ধ্যায় পুলিশ বারান্দা থেকে লাশ উদ্ধার করে।
মেয়েটির চাচা আব্দুল মান্নান জানান, বিয়ের পর আমরা কোন কিছু দিতে বাকি রাখিনি। কিন্তু বিয়ের পর থেকে হাবিবুল্লাহর মা শাহানাজ বেগম আসমার কাজে ভুল ধরতেন। হাবিবুল্লাহও মায়ের কথা শুনতো। তারা আসমাকে দেখতে পারতো না; নির্যাতন করতো। তিন চার মাস আগে আসমার এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করা হয়। সেখানে এখনো ক্ষত আছে।
রোববার সকালে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাবিবুল্লাহ আসমার ক্ষতস্থানে লাথি মারে।
আব্দুল মান্নান বলেন, সাথেসাথে আসমা ফোন করে তার পিতাকে বলে,’আব্বা, আমার কাটা জায়গায় লাথি মেরেছে। আমাকে মেরে ফেললো।’ এই বলে আসমা ফোন কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পরে পাড়ার লোকজন ফোনে আমাদের জানান,আসমা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
‘বিয়ের পর থেকে কয়েকবার পারিবারিক কলহ নিয়ে শালিস হয়েছে। দুইমাস আগে আমরা মেয়েকে আটকে দিয়েছিলাম। পরে স্থানীয় মেম্বর নিজ জিম্মায় মেয়েটিকে নিয়ে আসে। বাড়ির কেউ আসমাকে দিতে চায়নি। আমি দায়িত্ব নিয়ে ওকে পাঠিয়ে ভুল করেছি। আমাদের মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মণিরামপুর থানার এসআই শেখ আশরাফুল আলম বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুপুরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। যেয়ে দেখি বারান্দায় লাশ শোয়ানো। ওইসময় আসমার শ্বশুর বাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা সবাই পালিয়েছে। সন্ধ্যায় আমরা মরদেহ উদ্ধার করেছি। সোমবার (৬ জুলাই) সকালে লাশ মর্গে পাঠানো হবে। তখন জানা যাবে, ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা।
মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, লাশের গলায় দাগ পাওয়া গেছে। লাশ মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।