খুলনা বিটিসিএল’র আবাসিকে বাসা বরাদ্দে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

0

স্টাফ  রিপোর্টার

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড-বিটিসিএল, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনার বয়রা ও খালিশপুর আবাসিক কলোনিতে বাসা বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। একযুগেরও বেশি সময় ধরে অনেকেই বরাদ্দ ছাড়াই কোয়াটারে ফ্রি বসবাস করছেন। এমনকি বাসার ক্ষতিসাধন এবং মালামাল লুটপাট করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ নিয়ম মেনে আবেদন করে বছরের পর বছর ধরেও বাসা বরাদ্দ পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে, কর্তা-ব্যক্তিদের পছন্দ-অপছন্দ, সুবিধাভোগ এবং জবাবদিহিতা না থাকাসহ নানা কারণে খামখেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে তারা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে করে একদিকে বিটিসিএল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিটিসিএল, দক্ষিণাঞ্চল খুলনার বাসা বরাদ্দ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর কোস্টাল ওয়ারলেস কম্পাউন্ডে তিন জন কর্মচারিকে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দপ্রাপ্তরা হলেন- রাজস্ব ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের কনিষ্ঠ অফিস সহকারি (বিলোপযোগ্য) মো. মামুনুর রহমান (বাসা টাইপ-সেমিপাকা টিনসেড), একই দপ্তরের বার্তা বাহক (বিলোপযোগ্য) মো. রোকনুজ্জামান (বাসা নং-জি-২/৪) এবং খুলনা টেলিকম উপ-মহাব্যবস্থাপকের দপ্তরের কনিষ্ঠ লাইনম্যান মো. হায়দার আলী খোকন (বাসা নং-জি-২/২)। অভিযোগ রয়েছে, বাসা বরাদ্দের আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্মচারিরা তাদের নামের পাশের ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই কমিটি বাসাগুলো বরাদ্দ দেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দের পর থেকেই তাদের কাছ থেকে বিধি মোতাবেক মাসিক ভাড়া কর্তন করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা করেননি। ফলে রাজস্ব বঞ্চিত হয় কোম্পানি।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে অফিস চত্বরে খোদ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তারপরও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ- এ তিন মাসের ভাড়া বাদ দিয়েই এপ্রিল থেকে ভাড়া কর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারও আড়াই মাস পর গত ১৪ জুন মূখ্য মহা-ব্যবস্থাপক ও বাসা বরাদ্দ কমিটির সভাপতি বরাবর এ সংক্রান্ত অফিস পত্র প্রেরণ করেন বিটিসিএল খুলনার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ট্রান্সমিশন) মো. তরিকুল ইসলাম খান। অপরদিকে, নগরীর বয়রাস্থ বিটিসিএল কলোনির টাইপলেস বাসাটি ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল ওয়ার্কচার্জড কর্মচারি আরিফুর রহমানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ধরনের বরাদ্দ ছাড়ায় আগে থেকেই ডিজিএম টেলিকম খুলনার অধিনস্থ ক্যাজুয়াল শ্রমিক ফরহাদ হোসেন মন্টু (খালিশপুর ম্যানেজার, ফোনস’র গাড়ী চালক) এবং সিজিএম দক্ষিণাঞ্চল দপ্তরের ক্যাজুয়াল শ্রমিক এরশাদ হেসেন নান্টু (বর্তমানে ডিজিএম, গ্রাহকসেবা, খুলনার গাড়ি চালক) ওই বাসায় বসবাস করতে থাকেন।

ফলে সংশ্লিষ্ট অফিসের পক্ষ থেকে তাদের বাসা ছাড়তে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ, ১ এপ্রিল, ৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল ও ২৬ জুলাই পাঁচ দফায় চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের খুঁটির জোর এতই শক্তিশালী যে, তারা বাসা ছাড়েননি। উপরন্তু ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর ও ৩ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট বাসার দু’টি টিনের চালা, জানালার গ্রিল ও পাল্লা এবং দরজা ভেঙ্গে ফেলে। বিষয়টি জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মাস্টাররোল কর্মচারি আসলাম হাওলাদারের মাধ্যমে তাদের নিষেধ করা স্বত্বেও তারা সেটি উপেক্ষা করে ভাংচুর অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে ভেঙ্গে ফেলা মালামাল জব্দ করা হলেও শ্রমিক নান্টু-মন্টু বাসাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দিয়ে জব্দকৃত সরকারি মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় বলেও সূত্র জানিয়েছে।

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শাখার তৎকালীন কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র ঘরামী (ম্যানেজার, সুইচ, খুলনা) লিখিতভাবে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর, ১১ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি এই তিন দফায় উপ-মহাব্যবস্থাপক (মেট্রো) তরিকুল ইসলাম খানকে অবহিত করলেও তিনি রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, স্থায়ী কর্মচারি মো. নজরুল ইসলাম ও রিপন উদ্দিন এবং ক্যাজুয়াল শ্রমিক মো. জামাল উদ্দিন ও বিকাশ চন্দ্র দীর্ঘ ১৪ বছর ধরেই কোম্পানির বাসা ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। একইভাবে জুনিয়র লাইনম্যান (বিলোপযোগ্য) কারী ইস্রাফিল হোসেন (বয়রা টিএন্ডটি কলোনির জি-১/৪) বাসায়ও ১৪ বছর ধরে বসবাস করছেন। গত দেড় বছর ধরে তার চাকরি স্থায়ী হলেও তার কাছ থেকে বাসা ভাড়া কর্তন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, শীর্ষ এক কর্মকর্তার পছন্দের না হওয়ায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর আঞ্চলিক বাসা বরাদ্দ কমিটির সভায় টেলিকম খুলনার উপ-মহাব্যবস্থাপকের দপ্তরের কনিষ্ঠ লাইনম্যান (বিলোপযোগ্য) মো. শহিদুল ইসলামের বাসা বরাদ্দের আবেদনটি খারিজ করা হয়। কারণ দেখানো হয়, তার আবেদনকৃত লোকষ্ট (পরিত্যক্ত) ভিএইচএফ কম্পাউন্ডের বাসাটি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হলো না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পছন্দের লোক হওয়ায় ওই বাসায় বর্তমানে জুনিয়র ওয়ারম্যান (বিলোপযোগ্য) মো. আরিফুর রহমানকে ওঠানোর চেষ্টা চলছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একের পর এক অফিসের নির্দেশনা লঙ্ঘণ, সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধন ও লুটপাটসহ এতকিছুর পরও রহস্যজনক কারণে শ্রমিক নান্টু-মন্টুর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও উল্লিখিত বিভিণ্ন কারণে অন্যান্য কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারিরা বিটিসিএল’র ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে বিটিসিএল খুলনা মেট্রো’র উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. তরিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই কমিটি পর্যালোচনা করে বাসা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই। তবে, বাসায় ওঠার পরও মেরামত কাজ করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বিলম্বে ভাড়া কর্তন করা হতে পারে।’

শ্রমিক নান্টু-মন্টু কর্তৃক সরকারি সম্পদ ভাংচুর ও লুটপাট সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি তো অনেক আগের বিষয়। তারা ক্যাজুয়াল শ্রমিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা এখনও কর্মরত রয়েছেন। এমনকি ভাংচুর ও লুটের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।’