শরনখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের শরনখোলয় এক জামাত নেতার স্ত্রীর মর্যাদা পেতে প্রসাশনের দ্বারস্ত হয়েছেন এক নারী । তিনি এ ঘটনায় উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারকে দ্বায়ী করে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা জামায়াতের আমির সহ বিভিন্ন মহলে একাধিক অভিযোগ দ্বায়ের করেছেন।
উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিন কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যাক্তা মোঃ আয়শা আক্তার (২৭) তার অভিযোগে বলেন, কয়েক বছর পুর্বে উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের জনৈক এক ব্যাক্তির সাথে আমার বিয়ে হলে দু, বছর পর সেখান থেকে তালাক হয়ে যায়। ওই ঘটনার সুত্র ধরে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ফজলুল হক মোল্লার ছেলে নিকাহ-রেজিষ্টার (কাজী) ও শরনখোলা উপজেলা জামাতের (সাবেক) সেক্রেটারী মাওলানাঃ- মোঃ- সরোয়ার হোসাইন মোল্লা (ওরফে) বাদল কাজীর সাথে ২০১৯ সালে আমার পরিচয় ঘটে। তার পর থেকেই বাদল আমার পিছু নেয় এবং রাত দিন আমাকে ফোন করতে থাকেন । এক পর্যায়ে আমাকে সহ আমার বৃদ্বা মায়ের হাতে পায়ে ধরে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আমাকে বিয়ের প্রস্থাব দেন । পরে আমাদের বিয়ের সকল কার্যক্রম সারেন বাদল নিজেই। সেই থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে থাকতে শুরু করি। কিন্তু সেই সময় বাদল আমাকে বলেন , তিনি উপজেলা জামাতের বড় নেতা হওয়ায় এবং ইসলামের সঠিক কথা বলার কারনে আওয়ামীলীগরা আমার নামে গত কয়েক বছরে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। তাই বিয়ের বিষয়টা কিছুদিন গোপন রাখতে হবে ।
এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষ থেকে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান প্রাথী হবেন এবং নির্বাচনের পর আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাবেন । তাই বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষতি আছে । এভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আমাদের দাম্পত্ব্য জীবন ৮মাস চলে । কিন্তু চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল স্থানীয় ব্যাক্তিরা বাদলের কাছে আমাদের বিয়ের কাবিন দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেন না । পরে কাবিনের একটি কাগজ বাদল বাসায় নিয়ে আসলে তাতে দেখি দেন মোহর পাঁচ লাখ টাকার পরিবর্তে মাত্র দশ হাজার টাকা। তাও আবার (উসুল) পরিশোধ।
এ সময় আমি বাদলের কাছে কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন , আরে বোকা গ্রামবাসীর হাত থেকে রক্ষা পেতে আপাতত একটি নকল কপি তৈরী করেছি। বিষয়টি নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করোনা । কারন পাঁচ লাখ টাকার কাবিনের মুল কপি আমার অফিসে সংরক্ষন আছে । তার কিছুদিন পর বাদল আমাকে ফোন করে বলেন, তুমি আমাকে ভুলে যাও সোনা। তোমার সাথে আমার এখন আর কোন সম্পর্ক নাই। আমি তোমাক তালাক দিয়েছি । তখন আমি বলি আমার দোষ কি? তোমার প্রতারনার বিষয়টি আমি প্রসাশনকে জানাবো এ কথা বলতেই, বাদল আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। এখন আমি ও আমার বৃদ্বা মা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি ।
এছাড়া আমি কোন অন্যায় করিনি, কিন্তু বিনা কারনে বাদল আমাকে তালাক দেবেন কেন? আমি স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে আত্মহত্যা করব । আর এ জন্য দ্বায়ী থাকবেন বাদল ।
তবে ,এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী সরোয়ার হোসাইন বাদল বলেন , এক সময় সে আমার স্ত্রী ছিল। কিন্তু আমার সাথে খারাপ আচারন করায় তাকে তালাক দিয়েছি এবং দেন মোহরের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে । তাছাড়া স্ত্রী খারাপ আচারন করলে স্বামী তালাক দিতে পারে। সে বিধান ইসলামী শরীয়তে আছে ।
অন্যদিকে, তালাকের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়েন্দা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ- মাওলানাঃ- মোঃ মনিরুজ্জামান (মনির) বলেন , তালাক বিষয়টি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃনীত। কারো স্ত্রী গুরুতর অপরাধ করলেও তা মার্জনা করা সবচেয়ে উত্তম । এছাড়া মন চাইলেই স্ত্রীকে তালাক দেয়ার বিধান ইসলামী শরীয়তে নেই । তবে, তালাকের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্ত্রীর মতামত থাকতে হবে ।
জানতে চাইলে, উপজেলা জামাতের সহ-সভাপতি এবং খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা -মোঃ রফিকুল ইসলাম কবির বলেন , কারো অপকর্মের দ্বায় সংগঠনের নয় । বাদল বির্তকিত কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ায় ইতোমধ্যে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সংগঠনের সকল প্রকার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে, ক্ষতিগ্রস্থ ওই নারী বাদলের নামে মামলা করলে তাতে দলের কোন আপত্তি নেই ।
বাগেরহাট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা-মোঃ রেজাউল করিম জানান, এমন কোন অভিযোগ আমি পাইনি । এবং এটা সংগঠনের কোন বিষয় নয় ,এটা আইনের বিষয়।
এছাড়া শরনখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, ওই জামাত নেতার বিরুদ্বে একটি অভিযোগ পেয়েছি । তবে, আমার কিছু করার নেই । ওই নারীকে আদালতের যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ।