করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত দেশের শিক্ষা খাত। উচ্চশিক্ষায় অধ্যায়নরত ৩২ লাখসহ প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাসূচি এলোমেলো হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এক দশক ধরে পূর্বনির্ধারিত শিক্ষাসূচি অনুযায়ীই চলছে শিক্ষাব্যবস্থা। দীর্ঘ এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে তার বিশ্লেষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এখন পর্যন্ত সংসদ টেলিভিশনে কাস প্রচার আর কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে পড়াশোনা ছাড়া ক্ষতি পোষানোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেই। আশার কথা গত ১ জুন এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। ইউজিসি সূত্র বলছে, বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়ন করছে প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যয়ন করছে সাড়ে ২৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে প্রায় পৌনে ৪ লাখ শিক্ষার্থী। করোনাকালে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তারা ইতোমধ্যে অনলাইনেই চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে সামার সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রমও অনলাইনে শুরু হবে। এ অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাদের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে অনলাইনে কাস শুরুর তাগিদ দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও সরকারি কলেজগুলোতে অনলাইনে কাস শুরুর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও বড় বড় কিছু সরকারি কলেজ ছাড়া অন্যরা কেউ অনলাইনে কাস শুরু করতে পারেনি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দেখা দিচ্ছে সেশনজটের আশঙ্কা। শিক্ষা কার্যক্রম যাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে আশঙ্কা থেকে প্রথমে মাধ্যমিক স্কুলের জন্য সংসদ টিভিতে কাস পরিচালনা শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে শুরু হয় প্রাথমিকের কাস। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে এ শিক্ষা কার্যক্রম। দীর্ঘমেয়াদি সংকটের কথা মাথায় রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইনে কাস পরিচালনার তাগাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। তবে ইউজিসির আহ্বানের পরও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তার অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারছে না সফলভাবে। সফল না হওয়ার বিভিন্ন কারণও রয়েছে। বাংলাদেশে অনেক শিক্ষার্থী এ জাতীয় ই-লার্নিংয়ে অভ্যস্ত নয়। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অনেক শিক্ষকই পুরনো পাঠদান পদ্ধতিকে বেশি পছন্দ করেন। উল্লিখিত চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা ব্যয়বহুলও। এতে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মতো প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম থাকা একান্ত দরকার। বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে আভাস রয়েছে। এখন যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের জীবনে বড় ধরনের গ্যাপ সৃষ্টি করবে। যা তাদের সংকটে ফেলবে। আমরা বলব, টিভিতে কাস নেয়ার উদ্যোগটি ভালো। কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে আশা করি। এখন জরুরি শিক্ষার্থীদের ই-লার্নিংয়ে যুক্ত করা। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থেকে যেন গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়ে না যায়, বড় ধরনের সেশনজটের সৃষ্টি না হয় সে জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।