ঢাকা অফিস
কিট সংকটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে পরীক্ষাগারেও নমুনা জট তৈরি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে রোগীদের। কিট সংকটের কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই এই অচলাবস্থার অবসান হবে। কিট সংকটে পড়ে দুর্ভোগের শিকার হওয়ার কথা জানালেন সিলেটের ব্যবসায়ী ওয়ালিউর রহমান। তিনি গত জুনের তৃতীয় সপ্তাহে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন। করোনা পজেটিভ হিসেবে ফল পেয়েছেন ২৪ জুন (বুধবার)। উপসর্গহীন হওয়ায় ওয়ালিউর পরিবারের সঙ্গে মিশেছিলেন। করোনার ফল পজেটিভ আসায় আইসোলেশনে চলে যান তিনি। কিন্তু তার মনে শঙ্কা, পরিবারের অন্য সদস্যরা সংক্রমিত হলো কিনা!
নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল-ল্যাব ও সিভিল সার্জন অফিসের বরাত দিয়ে রাইজিংবিডির প্রতিনিধি মাওলা সুজন জানান, কিট সংকটের কারণে জেলার আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে নমুনা জট তৈরি হয়েছে। আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের ল্যাব প্রধান ডা. ফজলে এলাহী খান বলেন, ‘কিটস্বল্পতা তৈরির পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১ হাজার ৫০০ লাল রঙের কিট দেয়। কিন্তু পিসিআর মেশিনে হলুদ কিট ব্যবহার করা হয়। আর অধিদপ্তরে হলুদ কিট নেই। এ কারণে নমুনা পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না।’
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব কো-অর্ডিনেটর অ্যধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘আমাদেরও কিট শেষ পর্যায়ে। শেষ হলে অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হবে। এছাড়া, আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের ল্যাব বন্ধ থাকায় তাদের নমুনাগুলোও এখানে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে চাপ বেড়েছে।’ ফেনী জেলার ভুক্তভোগী ও বিভিন্ন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে রাইজিংবিডির প্রতিনিধি সৌরভ পাটোয়ারী জানান, এই জেলায় করোনা পরীক্ষার সিরিয়াল পাচ্ছেন না রোগীরা। এরই মধ্যে প্রতিদিনই করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।
ফেনী করোনা নিয়ন্ত্রণকক্ষের সমন্বয়ক ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, ‘হঠাৎ কিট সংকটে রোগী শনাক্তকরণ কাজ থমকে গেছে। শনাক্ত না হওয়ায় রোগীরা নিজের অজান্তে সমাজে বিচরণ করে সংক্রমণ বাড়াচ্ছেন।’ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, ‘কিট সংকট থাকায় নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ থেকে নমুনা পাঠাতে করতে নিষেধ করা হয়েছে।’ এই জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, ‘কিট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।’
একই তথ্য জানালেন রাইজিংবিডির লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি ফরহাদ হোসেন। এই জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দিনে দিনে নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা ও আক্রান্তের হার বাড়ছে। তবে, মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে।’ জানতে চাইলে কিট সংকট ও নমুনা জটের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিগগিরই কিট সংকট কেটে যাবে। এছাড়া, পরীক্ষার সংখ্যা কিভাবে আরও বাড়ানো যায়, তারও চেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘নমুনা বেশি হওয়ায় কোনো কোনো পরীক্ষায় সময় লাগছে। তবে, এ অবস্থারও উন্নতি হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার বক্তব্য জানতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।