খুলনাঞ্চল রিপোর্ট
করোনা থাবায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। পাশাপাশি নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ও শেষ হয়ে এসেছে। এবার তাদের অনেকেই ঘুরে দাঁড়াতে কৃষি, হ্যাচারি, ডেইরি ও পোল্ট্রিখাতের উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এই উদ্যোগের মূলধনের জন্য ব্যাংকঋণের শরণাপন্ন হচ্ছেন তারা। একই উদ্দেশ্যে ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে আছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প, অতিক্ষুদ্র, ক্ষদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের উদ্যোক্তারাও। ফলে ব্যাংকগুলোয় ঋণ আবেদনের চাপ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে অনেকের ঋণআবেদন মঞ্জুর করেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে যে,এই চার মাসে ৩১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। মে মাসে দেশের বেসরকারি বিভিন্নখাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এপ্রিলে এর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। যা মার্চে ছিল ৭ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৫৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ জুন পর্যন্ত ঋণের জন্য প্রায় ৫ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে শিল্পখাতে বড় উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, প্রান্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছাড়াও নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বিশেষ ঋণের আবেদন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশে ৮৫৪টি হ্যাচারি, আড়াই লাখ ডেইরি ফার্ম ও ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ পোল্ট্রি খামার রয়েছে। সারাদেশে অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আরও ৪৫ লাখ। যারা করোনায় সরাসরি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত প্রণোদনা অর্থ পেতে আবেদন করেননি।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টদের ধারণাÍআগামী ৩ মাসের মধ্যে ঋণ-আবেদনের পরিমাণ তিনগুণ হতে পারে। তবে সবাই চলতি মূলধন হিসেবে ব্যাংকঋণ নাও পেতে পারেন। ক্রেডিট রেটিংয়ে যেসব আবেদনকারীর আবেদন যোগ্য বিবেচিত হবেন, তারাই ঋণ পাবেন।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৮০ শতাংশ উদ্যোক্তা ঋণের আবেদন করেছেন। বেশি আবেদন পড়েছে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের। এসব আবেদন জমা পড়েছে চলতি মূলধনের জোগানের ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল এবং অতি ক্ষুদ্র শিল্প, প্রান্তিক কৃষক ও স্বল্প আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ক্যটাগরিতে। এই দুই খাতেই ঋণ আবেদন জমা পড়েছে ৫ লাখের বেশি। তবে এখনো ঋণ মঞ্জরির হার আশানুরূপ নয়। কারণ এই দুটি প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া মাত্র শুরু হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ছাড় করা হয়েছে। এর বাইরে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুটি আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থও ছাড় শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে ঋণ-আবেদন জমা পড়ছে। তারা যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাচ্ছে। এরপর যাচাই-বাছাই কমিটি পুনঃমুল্যায়ন শেষে প্রণোদনার অর্থ ছাড়ের নির্দেশনা দিচ্ছে।’ ঋণ ছাড়ের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও তিনি জানান।