গড়ব সোনার বাংলা: জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব: প্রধানমন্ত্রী

4
Spread the love


ঢাকা অফিস:


জাতীয় জীবনে আওয়ামী লীগের বিশাল অবদান ও আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মানুষের অধিকারের জন্য কথা বলে গেছে, মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছে, মানুষের জন্য কাজ করছে। স্বাধীনতা থেকে শুরু করে দেশের যা কিছু অর্জন সবই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়, মানুষ তার অধিকার পায়। অন্য সময় বাঙালীকে কিভাবে পিছু টেনে রাখবে সেই চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমরা সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব, এটাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে আমাদের অঙ্গীকার। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সপ্তাহের বিরতির পর শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে মঙ্গলবার দলের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের প্রতিজ্ঞা এদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলব।

জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব। মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাব। আজকের দিনে জাতির পিতার কাছে এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের এটাই প্রতিজ্ঞা-বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সত্যকে কখনও ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় না। জাতির পিতা শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর যে আকাক্সক্ষা তা আমাদের পূরণ করতে হবে। তাঁর অস্তিত্ব আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে। এক সময় বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু মুছে ফেলা যায়নি। সত্যকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের জন্য কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষ কিছু পেয়েছে।


সারাদেশে সৃষ্ট করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দুঃখ কষ্ট মানুষের থাকলেও আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের ছাত্রলীগ, কৃষক লীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে আছে। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রতিটি ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া থেকে শুরু করে লাশ দাফন করাসহ প্রতিটি কাজে মানুষের পাশে রয়েছে। যখন ঘূর্ণিঝড় (আমফান) এলো তখনও কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা সকলে সক্রিয় ছিলেন। আমাদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী বাস্তবায়নে দেশের প্রত্যেক এলাকায় বৃক্ষরোপণ করেও তাদের ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। ঠিক এভাবেই মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাব। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই বাংলাদেশের মানুষ কিছু পেয়েছে, দেশটা এগিয়েছে। অথচ অন্য সময় আমরা দেখেছি বাঙালীকে কিভাবে পিছু টেনে রাখবে সেই চেষ্টা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খুব সীমিত আকারে আমরা উদ্যাপন করছি। কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা-সীমিত আকারে টুঙ্গিপাড়া গেছেন (জাতির পিতার সমাধিসৌধে)। আর সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে (ধানম-ি ৩২) ফুল দেয়া হয়েছে। কারণ জনসমাগম হোক, সে ধরনের কর্মসূচী আমরা বাতিল করেছি জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে।

কারণ, আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সংসদ নেতা বলেন, করোনাভাইরাসের এই যে সমস্যা, এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বব্যাপীই একটি সমস্যা। এই ভাইরাসের যেন আর বিস্তার না ঘটে এবং আর মানুষ যাতে এতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে তার সরকার মুজিববর্ষ উদ্যাপনের সকল কর্মসূচী যেমন স্থগিত করেছে, তেমনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, যেটি বিশেষভাবে উদ্যাপনের কথা ছিল, সেটিও সীমিত করা হয়েছে। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্মকথার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ২৩ জুন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে সিরাজ-উদ-দৌলার পতন ঘটিয়ে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেই স্বাধীনতার সূর্যকে উদিত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পলাশীর প্রান্তরে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেই সূর্য উদিত হয়েছে ১৯৭১ সালে। যে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল (১৭৫৭ পলাশির আ¤্রকাননে), তৎকালীন পলাশীরই একটি অংশ আমাদের মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার বর্তমান মুজিবনগরের আ¤্রকাননেই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করে। যারা মুক্তিযুদ্ধটি পরিচালনা করেন। সেই অস্তমিত সূর্যই (পলাশির প্রান্তরের) ১৯৪৯ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবারও উদিত হয়। আর আওয়ামী লীগ সংগঠনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে¡ ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে।

মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানান।

তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং সে সময় কারাগারে থাকা দলটির তরুণ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের কথা, তাদের অধিকার, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করে গেছে।’ এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য জাতির পিতার আজন্ম লড়াই-সংগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা তাঁর সংগ্রামের অনেক বাধা-বিঘœ অতিক্রম করেছেন। জাতির পিতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরতে গিয়ে ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ জাতির পিতার দেয়া একটি ভাষণের উদ্ধৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের স্বাধীন দেশের মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে আর আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চাই।’

বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানবতার সেবা করে গেছে। এদেশের জনগণের সেবা করে গেছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষ, এদেশের কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, কামার-কুমোরসহ অগণিত মানুষ-তাদের কথাই বলেছে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করেছে। তিনি বলেন, আর এই দীর্ঘ সংগ্রামে অনেকেই আত্মাহুতি দিয়েছেন এবং তাদের এই আত্মত্যাগের জন্যই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। ভয়াল ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের- জাতির পিতা যখন বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পরে গড়ে তোলার পথে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় খন্দকার মোশতাক এবং জেনারেল জিয়াসহ কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের ফলে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়ে গেল। ১৯৭৩ সালের ৩০ মে জাতির পিতার দেয়া অপর একটি ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন,‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালী হিসেবে যা কিছু বাঙালীদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা।

যে ভালবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর অস্তিত্ব বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্র্রে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে আকাক্সক্ষা তা আমাদের পূরণ করতে হবে।