করোনা সংকট: নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে

2

করোনা পরিস্থিতি-উত্তর বড় ধরনের সংকট ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের শ্রমবাজার। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েতসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফেরত আসছে। এমতাবস্থায় বিদেশে শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্মসূচি থাকা আবশ্যক; বিশেষ করে নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। জানা গেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কর্মরত রয়েছেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। তবে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাসে বলছে, এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে ২২ শতাংশ রেমিট্যান্স কমবে। ইতোমধ্যে গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমেছে ২৪ কোটি ডলার। অবশ্য মে মাসে তা বেড়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরও দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী গিয়েছিলেন সৌদি আরবে, প্রায় ৫৭ শতাংশ।

তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানের দেশগুলোও মধ্যপ্রাচ্যের। দেশ দুটি হলো যথাক্রমে ওমান (১০.৩৮ শতাংশ) ও কাতার (৭.১৮ শতাংশ)। অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি আরব থেকে করোনার কারণে সামনের বছরগুলোতে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরতে পারেন অন্তত ১০ লাখ প্রবাসী কর্মী। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি কর্মীর ভিসা বাতিল করছে বলে খবর আসছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্সের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। অভ্যন্তরীণ চলাচল সীমিত করে দেয়ার কারণে ব্যাঘাত ঘটছে তাদের পেশাগত জীবনযাত্রায়ও। অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দেশের রেমিট্যান্স আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা খাতসংশ্লিষ্টদের। করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিকরা দেশে ফেরত আসায় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বেকারদের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের কথা জানিয়ে বলেছেন, তারা কিন্তু রেমিট্যান্স পাঠায়। বিদেশে অনেক বাংলাদেশি বেকার হয়েছেন। দেশে ফিরে তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে এভাবে প্রণোদনা দিয়ে স্থায়ী সমাধান হবে না। বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে এখন থেকেই। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম ক্ষেত্র হলো রেমিট্যান্স। জনশক্তি রপ্তানি এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। আশার কথা, জাপানে নতুন বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জাপানের পাশাপাশি অন্যান্য দেশও খুঁজে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। ২০১৮ সাল থেকে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া, সুদান, উগান্ডা এবং জাম্বিয়া বাংলাদেশকে ‘বিনিয়োগ ও কর্মংস্থান’ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়ে আসছে। সেসব প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা দেশগুলোতে সহজশর্তে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্পপণ্য, কৃষিজ খাদ্যশিল্প এবং তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগে মনোযোগ দিতে পারে। এসব দেশে আমাদের বড় কর্মসংস্থানের বাজার তৈরির সুযোগ রয়েছে।