মোঃ জাহিদুর রহমান সোহাগ দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি:
খুলনার দাকোপের বিভিন্ন নদনদীতে গোলদা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণের প্রতিযোগীতা চলছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে এ পোনা আহরণ করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় চিংড়ির পোনার সঙ্গে দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য পোনাও বিলুপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলার কাজিবাছা, পশুর, চুনকুড়ি, ঢাকি, কালাবগী ও শিপসাসহ বিভিন্ন নদীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে শত শত শিশু নারীসহ বয়ঃবৃদ্ধ মানুষ প্রকাশ্যে আহরণ করছে চিংড়ির এ রেণু পোনা। এতে একটি রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে প্রায় শতাধিক প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। আর প্রতিদিন এভাবে হাজার হাজার দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হওয়ায় দেশীয়
প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতিটি চিংড়ির রেণু পোনার সঙ্গে অন্য প্রজাতির অন্তত ১২০টি পোনা নিধন হচ্ছে। নেটজাল টেনে তীরে উঠিয়ে বেছে বেছে চিংড়ির রেণু পোনা রেখে অন্য পোনা ফেলে দিচ্ছে তীরে যা পরে কাকের খাবারে পরিনত হয়। যুগ যুগ ধরে এমন চিত্র প্রদর্শিত হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ নেই বললেই চলে। এসব প্রতিটি রেণু পোনা ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১.৫০ টাকা দামে বিভিন্ন ফড়েদের কাছে বিক্রি করছেন আহরণকারীরা।
বাজুয়া এলাকার পরিনিতা মন্ডল জানান, পশুর নদীতে নেটজাল টেনে যে রেণু পোনা পায় তা বিক্রি করে সংসার চালান। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে তার স্বামীরও তেমন একটা আয় না থাকায় মাঝে মধ্যে তিনিও একাজে যোগ দেন। তবে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে রেণু পোনা আহরণ করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার জানা থাকলেও সবাই রেণু পোনা ধরছে তাই তিনিও একাজে নিয়োজিত বলে জানান।
চালনা বাজার মৎস্য আড়ত সমিতির সভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রতিদিন তার আড়তের ৩টি সেটে রেণু পোনা হাজার প্রতি ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বাগদা চিংড়ির পোনা ১৬০০ টাকা হাজার। তবে বাগদার পোনা এখন অনেক কম হলেও প্রায় প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার রেণু পোনা বিক্রি হয় বলে জানান।
এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম সুলতান জানান, নদীতে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে কোন প্রকার মাছ ধরা যাবে না। মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযানের সময়ে তাড়া খেয়ে সবাই চলে যায়, পরে আবার এসে জাল টানে। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে জরিমানা অথবা শাস্তি দিলে হয়তো জালটানা বন্দ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। খুব তাড়াতাড়ি আবারও অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।