কপিলমুনিতে দু’ভাইকে মাদক মামলায় ফাঁসানো: এসআইয়ের ষড়যন্ত্রের নাটক ফাঁস!

8
Spread the love


স্টাফ রিপোর্টার, কপিলমুনি:


খুলনার কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির দারোগা অভিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে বেসামাল হয়ে পড়েছেন তিনি। দু’ভাইকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এসেছে সাপ। ঘটনা সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন এস আই অভিজিৎ। কল্পকাহিনী উপস্থাপন করে জনগনের দৃষ্টি কাড়তে কথিত ময়না তদন্ত প্রকাশ করিয়েছেন। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বেরিয়ে পড়েছে অপু ও দিপু দু’ভাইকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর নেপথ্যের কাহিনী।
জানাগেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মাদকের গডফাদার তালা থানার কানাইদিয়া গ্রামের এক যুবকের চক্রান্তে গ্রেফতার হয় অপু ও দিপু দু’ভাই। তাদের কাছ থেকে পুলিশ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে না পারলেও মাদক মামলার আলামত হিসাবে পুলিশের কাছে মাদক সরবরাহ করে গডফাদার ওই যুবক। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সূত্র দাবী করছে, দু’ভাইকে ফাঁসাতে পুর্ব পরিকল্পনা ছিল তাদের। এদিকে প্রকৃত ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এস আই অভিজিৎ রায় সম্প্রতি ময়না তদন্ত প্রকাশ করেন, যা দু’একটি অনলাইনে প্রকাশ করিয়েছেনও তিনি।
কথিত ময়না তদন্তের প্রকাশ মতে জানা যায়, এস আই অভিজিৎ রায় দু’ভাই অপু রায়হান ও দিপু রায়হানকে গত ২৩ মার্চ দুপুর ১২ টার দিকে কপিলমুনি বাজারের জনবহুল মাছবাজার সংলগ্ন রাস্তার উপর থেকে মাদকসহ গ্রেফতার করে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। এ সময় তাদের দু’ভাইয়ের কাছ থেকে তিনি মাদক উদ্ধার করেন। কিন্তু এতো জনসমাগমের মধ্যে গ্রেফতারের সময় কেউই তাকে মাদক উদ্ধার করতে দেখেননি। তবে দু’ভাইকে ধরে দ্রুত ফাঁড়ীতে নিয়ে যেতে দেখেছেন। একাধিক সুত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।


এরপর মাদক না পেলেও মাদক মামলায় ফাঁসানো হয় তাদের। আর এমন অভিযোগ এনে অসহায় মা হোসনেয়ারা বেগম কপিলমুনি প্রেসকাবে গত পহেলা জুন সংবাদ সম্মেলন করে দু’ছেলের মুক্তি দাবি করেছেন। যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে সব কিছুই এমনটি দাবী করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এস আই অভিজিৎ রায়কে দিয়ে আমার দু’ছেলেকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুত্রদ্বয়ের এই পরিণতি শুনে প্যারালাইসিস স্বামী সাহাজুল শোকে মুহ্যমানহয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এ ঘটনা অনুসন্ধানে পর্দার অন্তরালের চক্রান্ত বেরিয়ে পড়েছে।


সুত্র জানায়, এলাকায় মাদকের গডফাদার, নেশাখোর, দালাল ও কুখ্যাত চোরের সাথে দারোগা অভিজিৎ রায়ের রয়েছে গভীর সখ্যতা। স্থানীয় পেশাদার চোরের সাথে ওঠাবসা করে ভীষণ সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় কপিলমুনির পার্শ^বর্তী কানাইদিয়া গ্রামের মাদকের ওই গডফাদারের ইন্ধনে অপু ও দিপু দু’ভাইকে গ্রেফতার করেন এসআই অভিজিৎ রায়। এর আগে তিনি অপুকে গ্রেফতার করতে নিজ থানা পাইকগাছা সীমানা কপোতাক্ষ নদী পেরিয়ে পার্শ^বর্তী তালা থানার কানাইদিয়া গ্রামে যান। ওই সময় ইজিবাইক চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অপুকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেন অভিজিৎ। কিন্তু এলাকার মানুষের প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এসআই অভিজিৎ রায় বলেন, তিনি থানার অনুমতি নিয়ে পার্শ^বর্তী থানা এলাকায় অপুকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিলেন।


স্থানীয় সুত্রের দাবি, মাদকের গডফাদার ওই যুবকের সাথে হাত মিলিয়ে প্রথম পর্যায়ে অপুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। তবে দি¦তীয় পর্যায়ে কপিলমুনি বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসলে অপুকে আটক করে এস আই অভিজিৎ। এ সময় সাথে থাকা ছোট ভাই দিপুকেও ফাঁড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়। অবাক ব্যাপার যে, দু’ভাইয়ের কাছ থেকে সমপরিমান গাজা, ফেন্সিডিল ও ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে মাদক মামলা দিয়ে চালান দেন তিনি।


এদিকে অভিজিৎ প্রভাব খাটিয়ে অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদে কথিত ময়না তদন্তে তিনি দাবি করেন, দু’ভাই অপু দিপু চিহ্ণিত মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু সে দিন তাদের কাছ থেকে কোন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব উপস্থিতরা কেউ দিতে পারেননি। চিহ্নিত গডফাদার ওই যুবকের সাথে অভিজিৎ রায়ের সখ্যতার স্বাী কপিলমুনি বাজারের অনেকে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। সকলের মুখে একটাই প্রশ্ন মাদক না পেয়েও মাদক মামলায় চালান দেওয়া একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার এ কেমন চরিত্র ?


এই ঘটনাসহ এস আই অভিজিতের নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দীনের সাথে। তিনি বলেন, ‘ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত পূর্বক দোষী হলে অভজিতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’