গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। কখনও আবার তা তিন হাজার ছুঁই ছুঁই হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যানুপাতে দৈনিকই বাড়ছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু তাই নয়, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আক্রান্ত এবং মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারের নীতি নির্ধারকদেরও কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তারাও উপলদ্ধি করছেন, এখনই শক্ত পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে, সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আবার বিশেষজ্ঞরাও সতর্ক করে দিয়ে সরকারকে নতুন করে লকডাউনের পাশাপাশি প্রয়োজনে কারফিউ দিয়ে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
সেই পরামর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ আক্রান্তের সংখ্যায় পুরো দেশকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে লকডাউনের প্রস্তাবও রেখেছেন। তাদের দাবি, এখনই এটা না করা গেলে, কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব না। আর বর্তমানে যেভাবে মানুষ চলছে, তাতে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে। আমরা জানি, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সেই ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফায় ৩০ মে পর্যন্ত দুই মাসেরও বেশি সময় সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
কিন্তু তাতে করোনা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। বরং তা ক্রমেই বেড়ে গেছে। ছুটির সেই সময়টায় সাধারণ মানুষের বড় একটা অংশ স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষযগুলো আমলে নেয়নি। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। আবার জীবিকার প্রয়োজনে, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গত ৩১ মে থেকে অফিস-আদালত খুলে দেয়া হয়েছে। তার একদিন পর চালু হয়েছে গণপরিবহনও। তারপর থেকেই সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই মুহূর্তে দেশে করোনা শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৮৪৬ জনের। এই অবস্থায় নতুন পদক্ষেপ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেয়ার কথা সরাসরি না বললেও, তেমনই একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। রোববার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি। আমরা দেখেছি, প্রতিবেশি দেশ ভারতেও এমন জোন ভাগ করে আক্রান্তের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
এরই মধ্যে দেশটি ইতালিকে ছাড়িয়ে আক্রান্ত দেশের তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে। তাই জোন ভাগ করলেই যে করোনার বিস্তার রোধে সাফল্য আসবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে মানুষকে ঘরে আটকে রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সফল হয়েছে। আমরা মনে করি, যে কোনো উপায়েই হোক, মানুষ ঘরে রাখতে হবে। তবেই করোনোভাইরাস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।