দাকোপে ঝড়ে অনেকের ঘরবাড়ি মালামাল নদীতে ভেসে গেছে

27
Spread the love

খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন



দাকোপ (খুলনা) সংবাদদাতা:


থাকারঘর আম্ফান ঝড়ে পশুর নদীতে উড়ে নিয়ে গেছে। ধান,চাল, থালা, বাসনসহ অনেক মাল নদীতে ভেসে গেছে। এখনো জোয়ারের পানিতে হাবু-ডুবু খাচ্ছি। ছেলে মেয়ে নিয়ে বর্তমানে মাচার উপরে খোলা জায়গায় বাস করতিছি। খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। অশ্রু ভোরা চোখে এসব কথাগুলো বলছিলেন খুলনার দাকোপের বানিশান্তা ইউনিয়নের ঢাংমারী এলাকার পুলিন কৃষ্ণ সরদার (৬৫)। তার মত একই এলাকার রনজিত সরদার, সত্যজিত সরদার, উত্তরা মন্ডল, রতনা মন্ডলসহ আরও অনেকে একই অভিমত ব্যক্ত করেন।


খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইকোন আম্ফানের আঘাতে সুন্দরবন লাগোয়া ওয়াপদা বেড়িবাঁধের বাহিরে পশুর নদীর তীরে বসবাসরত উপজেলার ঢাংমারী, রেখামারী ও বানিশান্তা পতিতা পল্লীর অধিকাংশ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। পুলিনের মত নদীতে ভেসে গেছে অনেকের মালামাল এবং অসংখ্য মৎস্য ঘের। বর্তমানে খোলা আকাশের নীচে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব পরিবার। এখনো পর্যন্ত পায়নি তারা কোন ত্রান। এমকি কেউ তাদের খোঁবর পর্যন্ত নেয়নি বলে তাদের অভিযোগ। এছাড়া কালাবগী এলাকায় বেড়িবাঁধের বাহিরে অবস্থানরত ঝুলন্ত পাড়ায়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।


ঢাংমারী এলাকার সমাজ সেবক বিনয় কৃষ্ণ সরদার, স্বপন মন্ডল জানায়, মঙ্গলবার বিকাল থেকে এসব এলাকার লোকজন প্রত্যেক বাড়িতে দুই একজন বাদে সবাই ছেলে মেয়ে নিয়ে সাইকোন সেল্টারে আশ্রয় নেয়। ঝড়ের তান্ডবে এসব পরিবারের অধিকাংশ বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া পশুর নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে অনেকের ঘর, মালামাল ভেসে গেছে। ঝড়ে ঢাংমারী এলাকায় ৮৫টি রেখামারী ৮৮টি ও পতিতা পল্লীর ৯০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধবস্ত হয়েছে। এছাড়া কাচা রাস্তঘাট ভেঙ্গে বিলিন হয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ এসব লোকজন খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে তারা জানান।


এবিষয়ে বানিশান্তা ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন ওয়াপদা রাস্তার বাহিরে ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পতিতা পল্লী, ঢাংমারী, রেখামারী অধিকাংশ ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। উপজেলা থেকে কিছু ত্রান আসছে। খুব শিঘ্রই এগুলো তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল ওয়াদুদ জানান ঝড়ে গোটা উপজেলায় প্রায় ১২০০ ঘরবাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ৩ কিলো মিটার ওয়াপদা বেড়িবাঁধ এবং ৯ হাজার ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া বেড়িবাঁধের বাহিরে থাকা ৩০০ ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আনোয়ান হোসেন হাওলাদার এবং খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা বটবুনিয়া বাজার পরিদর্শন করেছেন। এসময়ে তারা ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগত অর্থ ও ঢেউটিন বিতরণ করেন বলে তিনি জানান।