নাটোরে অসহায় শতাধিক শামুকখোল পাখি রান্না করে খেল গ্রামবাসী!

8
Spread the love

এনামুল হক চিনু, নাটোর প্রতিনিধি:

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে উপকূলে নিজের জানমাল বাঁচাতে ব্যস্ত মানুষ বাংলাদেশেরও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ঝড় যখন প্রবেশ করে তখন তার দাপট থেকে বাঁচতে নাটোরের স্থানীয় মানুষজন নিজ বাড়িতে বা নিকটতম আশ্রয়ের খোঁজে ছোটে। আর তারই মধ্যে কিছু মানুষ অতিথী শামুকখোল পাখি ধরে নিয়ে ভুড়িভোজ করে। ঘটনাটি নাটোর জেলার বড়াইগ্রামে।

জানা যায়, ঝড়ের তাণ্ডবে মাটিতে আছড়ে পড়া শতাধিক অসহায় শামুকখোল পাখি ধরে নিয়ে ভুড়িভোজ করেছে স্থানীয় কিছু মানুষ। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বাতাসের তোড়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে প্রায় শ’ খানেক পাখি মাটিতে পড়ে গেলে ভোরের দিকে ঐ গ্রামের কিছু মানুষ পাখিগুলো ধরে নিয়ে জবাই করে রান্না করে। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পাখি প্রেমীরা।

বাজিতপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক মহসিন আলী বলেন, তিন-চার মাস ধরে গ্রামের বটতলা মোড়ের পাশের তিনটি শিমুল গাছে আস্তানা গড়ে শতাধিক শামুকখোল পাখি। দিনের বেলায় পাখিগুলো আশপাশের বিলে খাবার খেয়ে রাতে এসব গাছে এসে আশ্রয় নিত। এর মাঝে অনেকেই পাখিগুলো শিকার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গ্রামের সচেতন তরুণদের বাধার কারণে তাদের চেষ্টা সফল হয়নি। কিন্তু ঝড়ের সুযোগে কিছু লোভী মানুষের কারণে শেষ রক্ষা হলো না।

তিনি জানান, বুধবার রাত থেকে ঝড়ের তাণ্ডবে পাখিগুলো এক এক করে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় সুযোগসন্ধানী লোকজন পাখিগুলো ধরে বাড়িতে নিয়ে যান। মাংস হিসেবে রান্নার জন্য পাখিগুলো জবাই করে তারা। খবর পেয়ে স্থানীয় পাখি প্রেমীরা ছুটে যান বাড়ি বাড়ি। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। অনেকেই রান্নার জন্য এসব পাখির মাংস চুলায় চড়িয়ে দিয়েছেন বলে দেখেন তারা। পরে পাখিগুলোর আশ্রয় নেয়া গাছগুলোর কাছে গিয়ে আর কোন পাখি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি নিজেসহ গ্রামের অনেকেই এসব অতিথি পাখির ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাখি প্রেমী লোকজন এগুলো দেখার জন্য আসতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সব শেষ করে দিলো।

বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, পাখিগুলোর প্রতিটি ২-৩ কেজি করে ওজন ছিল। পাখিগুলোর প্রতি গ্রামের কিছু লোকের আগে থেকেই লোভ ছিল। ঝড়ের সময় মানুষ যখন নিজেদের জানমাল নিয়ে ব্যস্ত, তখন ওইসব লোকজন পাখিগুলো ধরে নিয়ে কেটে কুটে রান্নার উপযোগী করে ফেলে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন সাবু বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তবে ধরে নেয়া পাখির সংখ্যা ৫০-৫৫ টির মত হবে। গ্রামের লোকজনের সচেতনতার কারণে এতদিন পাখিগুলো ধরতে পারেনি। কিন্তু এবার আর পাখিগুলো বাঁচানো গেল না। এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম থানার ওসি দিলীপ কুমার দাস বলেন, বাজিতপুরে গ্রামে অতিথি পাখি শামুকখোল থাকার বিষয়টি জানা ছিল না। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।