মুক্তির পর খালেদা জিয়ার ৫০ দিন পার: সুস্থ ও ভাল আছেন

16

শরীফুল ইসলাম

মুক্তি পাওয়ার পর পঞ্চাশ দিন পার করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৭৫ বছর বয়সে এভাবে নিরিবিলি পরিবেশে একান্তে ৫০ দিন সময় কাটানো তার জীবনের একটি বিরল ঘটনা। এই ৫০ দিনে অসুস্থ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে তিনি এখন স্বস্তিতে আছেন। তবে বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি চিন্তিত। সূত্র জানায়, মুক্তি পাওয়ার পর দেড়মাস পুরোপুরি হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তখন দু’একজন স্বজন ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে দেখা না করলেও ইদানীং তিনি কারও কারও সঙ্গে দেখা করছেন এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন। ঈদের পর থেকে তিনি দলীয় নেতাসহ আরও কারও কারও সঙ্গে দেখা করতে চান। আপাতত বাসায় বসেই চিকিৎসা নিলেও ঈদের পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তার বাইরে যেতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা খালেদা জিয়া তার জন্য গঠিত চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে বাসায় তার সঙ্গে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নার্সের মাধ্যমে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন। এ ছাড়া আপাতত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা বাসায়ই করা হয়। তার ডায়াবেটিস এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। শারীরিক অন্য সমস্যাগুলোও স্থিতিশীল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রিউমেটিক আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। তবে এসব রোগে ভুগলেও মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকায় তিনি আগের চেয়ে ভাল আছেন। তাই রমজান মাসে নিয়মিত রোজা রাখছেন। এ ছাড়া তিনি অন্যান্য ইবাদতও করছেন। ছোট বোন সেলিমা ইসলাম মাঝেমধ্যে খালেদা জিয়ার জন্য বাসায় তৈরি করা খাবার ও ফলমূল নিয়ে দেখা করতে যান। কোন কোন দিন দুই বোন একসঙ্গে বসে ইফতার করেন।

সোয়া ২ বছর পর কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ২৫ মার্চ ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান। স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে করোনা পরিস্থিতিতে বয়স ও মানবিক বিবেচনায় সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি মুক্তি পান। মুক্তির শর্ত হচ্ছে- তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সরাসরি গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় উঠেন।

মুক্তি পাওয়ার দিন স্বজনদের পাশাপাশি বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও সেখানে গিয়ে তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে মুক্তি পাওয়ার পরদিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে গুলশানের বাসার দ্বিতীয় তলার শয়নকক্ষে তিনি হোম কোয়ারেন্টাইন শুরু করেন। প্রথম দেড় মাস বাসার বাইরে থেকে ২ জন ডাক্তার এক দিনের জন্য এবং ছোট বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার মাঝে মাঝে গিয়ে দেখা করেন। এর বাইরে কাউকে তার গুলশানের বাসায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তবে ১১ মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ১২ মে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। আরও দু’একজন বিএনপি নেতাও যে কোন দিন তার সঙ্গে দেখা করতে ফিরোজায় যেতে পারেন।

জানা যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস দেখা করতে গেলে খালেদা জিয়া করোনা পরিস্থিতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চান। এ সময় তিনি চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য সারাদেশে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন। অনেক চেষ্টার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তারা তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া তারা করোনা পরিস্থিতিতে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় খালেদা জিয়া নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে সারাদেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন।

মুক্তি পাওয়ার একদিন পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে গুলশানের বাসার দ্বিতীয় তলায় হোম কোয়ারেন্টাইন শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে বাসায়ই অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলে। ওষুধ সেবনসহ তাকে চিকিৎসা কাজে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বাসায়ই একজন নার্স অবস্থান করছেন। এ ছাড়া লন্ডন থেকে তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান তার চিকিৎসার সার্বিক বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন।

খালেদা জিয়া হোম কোয়ারেন্টাইন শুরুর পর বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা মাঝে মাঝে গুলশানের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডাঃ মামুন কখনও কখনও গিয়েছেন। এর বাইরে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গেলেন।

জানা যায়, বাসায় তৈরি করা নিজের পছন্দের খাবার গ্রহণ, ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ সেবন ও প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত কুশল বিনিময় করতে পেরে খালেদা জিয়া আগের চেয়ে ভাল আছেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে তার বাইরে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। নিজের এবং অন্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তিনি আসন্ন ঈদ পর্যন্ত গুলশানের বাসায় অবস্থান করেই প্রয়াজনীয় চিকিৎসাসেবা নেবেন। তার বাসায় অবস্থান করছেন দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কাজের মেয়ে ফাতেমা ও একজন পাচক।

মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরার পর খালেদা জিয়ার পুরো জীবনযাত্রাই পাল্টে গেছে। তিনি এখন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যান। সারাদিন টিভি দেখে সারাবিশ্বের খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি প্রিয়জনদের সঙ্গে ফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে কুশল বিনিময় করেন। বিশেষ করে লন্ডনপ্রবাসী বড় ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান, তাদের মেয়ে জায়মা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি, তার মেয়ে জাসিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গে কথা বলেন নিয়মিত। এতে করে তার মন ভাল থাকে। এ ছাড়া দেশে থাকা ছোট বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমার সঙ্গে খালেদা জিয়া নিয়মিত কথা বলেন।