ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনাকে স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও সংকট হিসেবে দেখার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই, কিন্তু করোনার অভিঘাত মূলত যে অর্থনীতিতে সে বিষয়টি দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। করোনার জন্ম ও বিকাশের এবং বিশ্বব্যাপী আঘাতের মূল প্রেরণা যে অর্থনৈতিক মোড়লীপনার খাত ও ক্ষেত্র দখল, পুঁজিবাদ ও বিশ্বায়ন-মুক্তবাজার ব্যবস্থায় চপেটাঘাত, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথ পরিষ্কার করা এবং নব্য সামন্তবাদী পরাশক্তির উদ্ভব তা বুঝতে আর সময় নিচ্ছে না।
করোনার উৎস, অতি সংক্রমণের প্রসার, প্রসার প্রতিরোধ এবং ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপট নিয়ে বিশ্ব শক্তিসমূহের মধ্যে কোনো ঠা-া যুদ্ধ পরিস্থিতি আছে কিনা, মানবিক বিপর্যয় রোধে তাদের কারো কারো দৃশ্যমান ব্যর্থতার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য বা অভিসন্ধি আছে কিনা তা নিয়ে সমাজ, অর্থ ও রাজনীতি বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছেন। মার্কিন ভাষাতত্ত্ববিদ-দার্শনিক নোয়াম চমস্কি এই সেদিন সোজাসাপ্টা বলেই ফেলেছেন চীনের বাইরে দেশগুলোর কাছে করোনার ভয়াবহতার তথ্য আগে থেকে থাকা সত্ত্বেও (ঘড়ঃযরহম ধিং ফড়হব. ঞযব পৎরংরং ধিং ঃযবহ সধফব ড়িৎংব নু ঃযব ঃৎবধপযবৎু ড়ভ ঃযব ঢ়ড়ষরঃরপধষ ংুংঃবসং ঃযধঃ ফরফহ’ঃ ঢ়ধু ধঃঃবহঃরড়হ ঃড় ঃযব রহভড়ৎসধঃরড়হ ঃযধঃ ঃযবু বিৎব ধধিৎব ড়ভ .) রাজনৈতিক ভেদবুদ্ধির ফেরে কিছুই করা হয়নি, নইলে করোনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেত।
সে পরিপ্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে দেশে দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলার সময় এবং করোনা-উত্তরকালে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিকে মনোনিবেশ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কথা না মেনে উপায় নেই যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ শারীরিকভাবে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে তার চাইতে করোনাকালে কর্ম ও আয় উপার্জন হীন হয়ে, অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে আর্থিক সংকটে তার শতসহস্রগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যক্তি ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য করোনা তাই বড় হুমকি। এই মুহূর্তে মানবসম্পদ বাঁচানোর জন্য প্রযোজ্য সবাইকে দৈনন্দিন খোরাকি পৌঁছাতে হবে, অব্যাহত রাখতে হবে যতদিন তারা স্বাভাবিক কর্মচঞ্চল আয় উপার্জনের অবস্থায় ফিরে না আসে। সবাইকে প্রয়োজনমতো খাদ্য খোরাকি নিয়মিত পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনা হতে হবে নিশ্ছিদ্র ও দুর্নীতিমুক্ত। প্রথমদিকে উৎসাহী সহায়তাকারীদের ইতবিক্ষিপ্তভাবে খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণে আগ্রহ দেখা যাবে, ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থার পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা বিতরণের উদ্যোগ থাকবে, কিন্তু এ তৎপরতাকে নিয়মিত ও টেকসই করতে খোরাকি ভাতা বা সামগ্রী বিতরণের কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতে দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। আপদকালীন তাদের দেখার দায়িত্বও নিতে হবে। জনসম্পদই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ অর্থনীতির ভরসা। সুতরাং প্রান্তিক মানুষগুলোকে শুধু বাঁচিয়ে রাখা নয়, তারা যাতে সক্ষম থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সংকট কত দিন স্থায়ী হবে জানা না থাকায় আগামী ৬ মাস কিংবা ১ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।
অর্থনেতিক কর্মকা- এখন থেকে কঠোর কৃচ্ছ্র অবলম্বনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। করোনা জাতীয় অর্থনীতিতে এতদিনের অর্জিত সাফল্য ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে শুধু শ্লথ করবে না, ক্ষেত্রবিশেষে পিছিয়ে দেবে এবং গোটা অর্থনীতিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে ছাড়বে। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠে করোনা-উত্তরকালে স্বনির্ভর হতে বা থাকতে এখন থেকেই সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তি ও সামষ্টিক খাতে সর্বত্র উন্নয়ন অনুন্নয়ন বাজেটে ব্যয় সাশ্রয়ী হতে কঠোর কৃচ্ছ্র সাধনের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিতে হবে। সব প্রকার অপ্রয়োজনীয়, অনুৎপাদনশীল খাতে সময়, সামর্থ্য, সমর্থন ও অর্থের অপচয় অপব্যয় পরিহার করা আবশ্যক হবে। করোনা বিশ্বব্যাপী তার আক্রমণের দ্বারা, বড়-ছোট সব অর্থনীতিকে কুপোকাত করে এই সত্য জানান দিয়ে যাচ্ছে যে এখন থেকে যার যা আছে তাই দিয়ে তাকে চলতে হবে। পরমুখাপেক্ষী কিংবা পরনির্ভরশীল হওয়া বা থাকার সুযোগ হবে সীমিত। সুতরাং স্বনির্ভর আর্থিক স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পথে আরো বেশি ‘হিসাবি’ আরো বেশি ‘সতর্ক’ ও সাবধানতা অবলম্বনকে জাতীয় চিন্তা-ভাবনা ও অভ্যাসের আওতায় আনতে হবে।
অভ্যন্তরীণ বাজার চাঙ্গা রাখতে যা যা করা দরকার স্বাস্থ্য ও জীবিকা পরস্পরের হাত ধরে চলে। তাই করোনা মহামারি থেকে জনগণকে রক্ষায় স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ছোট-বড় ম্যানুফাকচারিং, আমদানি রপ্তানি, ব্যবসা বিপণন, কৃষি (খাদ্য, সবজি, মাছ, মাংস) উৎপাদন, পরিবহন, পর্যটন, সেবা ও আর্থিক খাতে পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তাদের করোনায় ক্ষয়ক্ষতির শুমার করে প্রথমত তাদের টিকে থাকা এবং করোনার প্রকোপ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যার যার কাজ জোরেশোরে শুরু করতে পারে সেজন্য প্রণোদনা প্যাকেজ আকারে নগদ সহায়তাসহ ট্যাক্স ট্যারিফ ফিসকাল ইনসেনটিভ ঘোষণা করা। টার্গেট গ্রুপভিত্তিক সহায়তা বিতরণ ও ইনসেটিভ প্রদানের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব পরিহার, পক্ষপাতহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টি ও জবাবদিহির ব্যবস্থা সংবলিত নীতিমালা ও অনুশাসন অনুসরণ আবশ্যক হবে।
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বিধান, সুশাসন কার্যকর ও নীতি-নৈতিকতার অধিষ্ঠান জোরদার করা, যথাপ্রযোজ্য সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের আর্থিক খাত করোনা-পূর্বকাল থেকেই বেশ কিছু বশংবদ দুর্বলতায় সংক্রমিত। সমাজে আয় বৈষম্য বৃদ্ধির মাত্রা সীমা অতিক্রান্ত হয়ে আছে। করোনা-উত্তর পরিবেশে আয়-ব্যয় বণ্টন বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়টি সামাজিক সংহতি ও করোনায় ক্ষতি হেতু সবার বর্ধিত চাহিদা ও দাবি পূরণের পথে শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই করোনা-উত্তরকালে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যেসব দেশে আয়-ব্যয় বৈষম্য পরিস্থিতি আগে থেকেই রোগাক্রান্ত সেসব দেশে গণঅসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপটে নিজ নিজ দেশকেই তা মোকাবিলায় পারঙ্গম হতে হলে লুণ্ঠিত টাকা বা সম্পদ পুনরুদ্ধার ও বণ্টনে বৈষম্য/দুর্নীতি দমনের আবশ্যকতা দেখা দেবে। পণ্য ও সেবা উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, বাজার ব্যবস্থাপনায় ‘নিজেরটা নিজে দেখ’ নীতি অবলম্বনের তাগিদ আসবে। করোনার বিশ্বব্যাপী বিচরণে ও মোটাতাজাদের সরু হওয়ার কারণে জাতীয় ও বিশ্ব অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার চত্তর চৌহদ্দিতে এই উপলব্ধি পরিব্যপ্ত হচ্ছে বা হবে যে ‘পুঁজিবাদ’, ‘বিশ্বায়ন’ ও ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’র ধ্যান-ধারণা হালে পানি পাবে না। এখন ‘চাচা আপন বাঁচা’ নীতিতে অবগাহনের প্রয়োজন হবে। আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় সাফল্য আছে। একে আরো জোরদার করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশের রয়েছে উর্বর কৃষিজমি, জলাশয়, অধিক ফলনশীল শস্য উৎপাদনের অবকাঠামো, উদ্যম ও উদ্যোগ সেহেতু খাদ্যশস্য, সবজি, মৎস্য ও মাংস নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্বের বর্ধিত ও সৃজিত চাহিদা মেটানোতে বাংলাদেশ বরং এ খাতে রপ্তানির মহাসড়কে উঠতে পারবে। করোনা এই সুযোগ বাংলাদেশের জন্য এনে দেবে যদি এ খাতের প্রতি যতœবান ও মনোযোগ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের মানবসম্পদ তৈরি পোশাক খাতে যে অবদান রাখছে তাতে ভ্যালু এডিশন আরো বাড়ানো সম্ভব হবে বাংলাদেশ যদি কাঁচামাল, মেশিনারিজ ও টেকনোলজিতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তুলতে পারে। যে কোনোভাবে হোক ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে গড়ে তুলতে মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের মানবসম্পদকে বাধ্যতামূলকভাবে ভোকেশনাল ট্রেনিং দিয়ে, কারিগরি উচ্চ শিক্ষায় মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে, প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ দেশে যে কোনো বৃত্তিমূলক পেশায় এবং বিদেশে ‘ভালো বেতনে’ কাজ পাবেন। মানবসম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য করোনা-উত্তর বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে এ আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়।
করোনাকালে আমাদের বোধোদয় হচ্ছে সামনের দিনগুলোর নিয়ন্তা হবে ভার্চুয়াল যোগাযোগ সংস্কৃতির। ডিজিটাল প্রযুক্তি কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সময়ের চেয়েও এগিয়ে আছে, এটি একটা বড় প্লাস পয়েন্ট। এই অবকাঠামোতেই বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা উদ্ভাবক দেশে এবং বিদেশে ভার্চুয়াল অর্থনীতিতে সফলতার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। অতএব মনোযোগ প্রয়োজন এখানেও।
সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খতে (বিশেষ করে ব্যক্তি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প/কর্মোদ্যোগে) বিনিয়োগের পাল্লা ভারী করতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ নীতিমালায় সংস্কার ও নতুন নতুন পথ পন্থার সমাবেশ ঘটানো প্রয়োজন হবে। বেসরকারি বিনিয়োগই কর্মসৃজন, ভোক্তা সৃষ্টি ও পোষণ, পণ্য ও সেবা উৎপাদনের হাতিয়ার। ব্যাংক ঋণ প্রবাহ সরাসরি ক্ষুদ্র মাঝারিদের কাছে বিনা মাসুলে যাওয়া আসে করতে পারে, বেল আউট-ইনসেনটিভ-প্রণোদনা সুযোগ-সুবিধা শুধু বড়রা বা মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে না নিতে পারে আর আইন-কানুনের খড়গ শুধু প্রান্ত ও পান্থজনের বেলায় না হয় সে বিধান বা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বা হওয়া লাগবে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের দায়িত্বটি সুচারু, ন্যায়নীতিভিত্তিক, দুষ্টের যম শিষ্টের বান্ধব হিসেবে পরিপালিত হলে রাজস্ব আহরণ যৌক্তিক মাত্রায় পৌঁছাবে। যেসব খাত বা ক্ষেত্র থেকে মোটা দাগের কর/শুল্ক রাজস্ব আসবে সেখানে অন্ধ আচরণ, অর্জিতব্য রাজস্ব আয়কে ভিন্ন পদ্ধতির আড়ালে আবডালে চ্যানেলাইজড হতে দিলে, সরকারি সংস্থার দেয় রাজস্ব রাজস্ব বিভাগের পরিবর্তে কিংবা তাদের কাছে পাওনা সরকারের দায়দেনা সরাসরি পরিশোধের পরিবর্তে অন্যত্র রাখার বা দেয়ার ব্যবস্থা হলে রাজস্ব আয়ের হিসাব মিলবে না এবং তহবিল ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। করোনা-উত্তরকালে এসব যথা দেখভালের আওতায় আনা প্রয়োজন হবে।
করোনার অভিঘাত সঞ্চারিত হবে প্রধানত রপ্তানি খাত, প্রবাসী আয়, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়। নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনমানের অবনতি হবে। রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যথেষ্ট কম হবে। করোনা-সংকটের কারণে সরকারের আয় কমবে, ব্যয় বাড়বে। গরিব-নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সহায়তা বাড়াতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে করের হার কমাতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে মওকুফ করতে হবে। ফলে বাজেট ঘাটতি বেশ বাড়বে। রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনাসহ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। নিজস্ব ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এ অর্থ জোগান দেয়া কঠিন হলে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক থেকে মঞ্জুরি সহায়তা, সফট লোন বা সহজ ঋণের জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। বিনিময়ে আর্থিক খাতে সুশাসন, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যবসা সহজীকরণের শর্ত পূরণ করার জন্য এসব ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে ১. বাংলাদেশ অর্থনীতির বহির্মুখিনতাকে অন্তর্মুখীনকরণ, বৈদেশিক সাহায্য, বিদেশি বিনিয়োগ, বিদেশি কাঁচামাল, প্রযুক্তি ও পরামর্শ কমিয়ে দেশীয় লাগসই প্রযুক্তি, কাঁচামাল, সক্ষমতা, মানবসম্পদ ব্যবহারসহ নিজ বাজার সৃষ্টি তথা নিজের দিকে তাকানোর উপায় উদ্ভাবন। ২. আন্তঃসহায়ক সলিলাশক্তিকে সম্মান, সমীহ ও অন্তর্ভুক্তি। জনগণই সম্মিলিতভাবে পরিশ্রম ও প্রয়াসের দ্বারা দেশের সব সাফল্য আনে। তাদের এই সক্ষমতা ও ভূমিকাই আন্তঃসহায়ক সলিলাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে চেতনা ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয় তাকে যথা স্বীকৃতি ও সম্মান দেয়া হলে জনগণের পরিশ্রমকে, জনআকাক্সক্ষাকে, দাবিকে সমীহ করা হলে দেশ জাতি তথা জনগণ উন্নয়ন অর্থবহ ও টেকসই হবে। ৩. পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী কার্যক্রম গ্রহণে আরো সতর্ক সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। ৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় লাগসই সক্ষমতা বৃদ্ধি। সংক্রামক অসংক্রামক রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা ও নীতিমালা নির্দিষ্ট করা। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : সরকারের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।দৈনিক ভোরের কাগজ থেকে নেয়া।