ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে দেশের আদালতে বিচার শুরু: জারি করা হয়েছে ১৪ দফা নির্দেশনা

8
Spread the love

ঢাকা অফিস

প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দেশের সকল আদালতসমূহে স্বল্প পরিসরে আজ সোমবার থেকে বিচার কাজ শুরু হচ্ছে। করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় দুই মাস দেশের সকল আদালত বন্ধ থাকায় নানা সমস্যার পাশাপাশি বাড়ছিল মামলা জট। সেই পরিস্থিতি উত্তরণে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক উচ্চ আদালতে রিট, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মোশন শুনানির জন্য বসবে তিনটি একক বেঞ্চ। অপরদিকে অধস্তন আদালতে শুধুমাত্র জামিন শুনানি হবে। এদিকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আইনজীবীরা কিভাবে মামলা দায়ের ও শুনানিতে অংশ নেবেন সে লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক জারি করা হয়েছে ১৪ দফা ব্যবহারিক নির্দেশনা। আজ রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় ওই নির্দেশনাসমূহ অনুমোদনের পর জারি করা হয়। সভায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা:

নির্দেশনার আলোকে আইনজীবীরা মামলার আবেদন ও নথিপত্র ই-মেইলের মাধ্যমে দাখিল করবেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ অফিসারের ই-মেইলে প্রেরিত মামলার সকল নথিপত্রের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তার জন্য দায়ী হবেন মামলার ফাইলিং লইয়ার। মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী শুনানির দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেবেন বিচারক। মামলার আবেদন ও দাখিলকৃত নথির একটি প্রিন্ট কপি সংরক্ষণ করতে হবে। যেসব মামলার শুনানি হবে তার একটি অনলাইন কার্যতালিকা থাকবে। যেদিন শুনানি হবে সেদিন মামলার সকল পক্ষের আইনজীবীরা সশরীরে নয়, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নিবে। বিচারক ও আইনজীবীকে যথাযথ পোশাক পরিধান করতে হবে। শুনানির পর মামলার রায় বা আদেশের অনুলিপির স্ক্যান কপি ই-মেইলে পাবেন আইনজীবীরা। ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার সকল নির্দেশনা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে দেয়া হয়েছে।

হাইকোর্টে বসবে তিনটি একক বেঞ্চ:

আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে বিচার কাজ পরিচালিত হবে। সেজন্য প্রধান বিচারপতি রিট, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মোশন এবং অন্যান্য মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য তিনটি একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। এর মধ্যে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে জরুরি সকল প্রকার রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণের এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন জরুরি সকল প্রকার ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদন গ্রহণ করবেন। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে অন্যান্য মামলার শুনানির জন্য এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকরা শুধুমাত্র জামিন শুনানি গ্রহণ করবেন। সকল জেলা ও দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের পাশাপাশি চীফ জুডিসিয়াল ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ থেকে এই জামিন শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান।

যে অধ্যাদেশে দূর হয় বাধা:

দেশের সর্বোচ্চ ও নিম্ন উভয় আদালতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ শনিবার জারি করা হয়। সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদ আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ জারি করেন। অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বিচারের যে বাধা ইতিপূর্বে ছিলো তা দূর হয়।

এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী অডিও-ভিডিও বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় প্রদান করবেন বিচারকরা। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে আইনজীবী ও মামলার পক্ষগণ বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। অর্থাৎ মামলার পক্ষগণ বা আইনজীবীকে সশরীরে আদালত কক্ষে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নাই। অডিও-ভিডিও বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যম আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ আদালতের বিচার কাজে অংশ গ্রহণ করলে তা ভার্চুয়াল উপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে বলে ওই অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা আইন দেশকে নতুন অধ্যায়ে সূচিত করার আইন: আইনমন্ত্রী

ঢাকা অফিস

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রণীত ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ তথা ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা আইন একটি যুগান্তকারী আইন। এটি বাংলাদেশকে আর একটি নতুন অধ্যায়ে সূচিত করার আইন। আজ রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বনানীস্থ বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভার্চুয়াল কোর্ট বসিয়ে তাদের আদালত পরিচালনার কথা চিন্তাভাবনা করে। সেক্ষেত্র বলতে পারি বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে নেই। আইনমন্ত্রী বলেন, সাক্ষ্য আইন সংশোধন হওয়ার পর এই অধ্যাদেশে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বিচারিক কাজগুলো শুরু করা যাবে। তখন আমাদের নিম্ন আদালত তথ্য- প্রযুক্তি মাধ্যম ব্যবহার করে ট্রায়াল, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনতে এবং রায় প্রদান করতে পারবে।

তিনি বলেন, দেশে যেহেতু ভার্চুয়াল কোর্ট আগে ছিল না তাই এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তবে এই অধ্যাদেশ প্রণয়নের চিন্তাভাবনার শুরু থেকে বিচারকদের জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয়েছিল। এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান থেকে তারা স্বল্প পরিসরে জামিন শুনানিসহ অন্যান্য কাজ করতে পারবেন।