আক্রান্ত বেশি তিন পেশায়: পুলিশ ১২৮৫, চিকিৎসক ও নার্স ১০২৪, গণমাধ্যমকর্মী ৬৭

1
Spread the love

ঢাকা অফিস

করোনায় কাবু পুরো বিশ্ব। গত দেড় মাসে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। দুইদিন আগে ছাড়িয়েছে দশ হাজারের ঘর। তবে একক পেশা হিসেবে পুলিশ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এই তিন পেশাজীবীদের মৃতের সংখ্যাও বেশি। অন্যান্য পেশাজীবীরা যখন সাধারণ ছুটির আওতায় নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন তখন এই তিন পেশার মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত। রোগীর চিকিৎসায়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়া আর সচেতন করার ক্ষেত্রে মাঠে থাকা এই মানুষরা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে। পুলিশকে নিয়ে নানা সময় সমালোচনা হলেও এই মহামারিতে তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সাধারণ মানুষ।

এই করোনায় সময়গুলোতে তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, একক পেশা হিসেবে সবচেয়ে বেশি সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এই পেশার সদস্যরা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১২৮৫ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী গত শুক্রবার এই বাহিনীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৭৭ জন। শনিবার ৬১ জন বেড়ে তা ৭৪১ জনে দাঁড়ায়। রোববার বেড়ে হয় ৮৫৪ জন, সোমবার আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯১৪ জনে, সর্বশেষ  বৃহস্প্রতিবার এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১২৮৫ জনে। হিসেব অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এদের মধ্যে রাজধানীতেই ৬৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সারা দেশে এই পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে আছেন ২৬৮৯ জন, আইসোলেশনে ১০৮৯ জন, সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৯৩ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

এই সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ফ্রন্ট লাইনের ফাইটার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। নানান সংকটের মাঝে থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন এসব যোদ্ধারা। তাদেরই প্রত্যক্ষভাবে রোগীদের সংস্পর্শে থাকতে হয় সবসময়। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে ৬২৪ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২ চিকিৎসকের। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৭৮ জন। বাংলাদেশ  বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি (বিবিজিএনএস)-এর তথ্য অনুযায়ী ৪০০ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এখন একটু আক্রান্তের সংখ্যা কম। আগে কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল। এখন আর সেটা নেই। নার্সদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ ছিল তথ্য গোপন করে করোনা আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হতো। সেটা আর এখন নেই। যার কারণে এখন কিছুটা কমছে। ভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ওয়ার্ডবয় আক্রান্ত  হয়েছে প্রায় শতাধিক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকদের রোগীদের কাছাকাছি যেতে হয়, তাদেরকে চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু ডাক্তাররা যখন সঠিক পিপিই পাবে না তখন তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। সেটিও একটি কারণ। অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাস্তবতা বোঝানো যায় না।

সংবাদ সংগ্রহের জন্য সংবাদকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা, সমস্যাসহ নানা বিষয় তুলে আনছেন তারা। সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত থাকতে হচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে। ঢাকাসহ সারা দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৭ গণমাধ্যকর্মী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ১২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দৈনিক সময়ের আলোর চিফ রিপোর্টার ও নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকনের। এছাড়া একই পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মাহমুদুল হাকিম অপুর মৃত্যু হয়েছে করোনা উপসর্গ নিয়ে।