আনোয়ার হোসেন, মণিরামপুর (যশোর) :
সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহের সময়সীমা শুরু হয়ে পার হয়েছে ১৩ দিন। গত ২৬ এপ্রিল থেকে মণিরামপুরে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় কাজ শুরু করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এই কাজের উদ্বোধন করতে পারেনি খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। কখন থেকে ক্রয় কাজ শুরু হবে দিনক্ষণ ঠিক করে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বলছেন, কৃষক আগ্রহ না হওয়ায় এবং ধানের আদ্রতা বেশি থাকায় ধান ক্রয় শুরু করা যাচ্ছে না।
এবারে যশোরের মণিরামপুর খাদ্যগুদামের মাধ্যমে চার হাজার এক মেট্রিকটন বোরো ধান সংগ্রহ করবে সরকার। সেইলক্ষে ইউনিয়নভিত্তিক লটারির মাধ্যমে চারহাজার একজন কৃষক বাছাই করা হয়েছে। এই তালিকার কৃষকরা ১৫ জুলাই পর্যন্ত ধান বিক্রি করতে পারবেন। এদের কেউ ব্যর্থ হলে ১৬ জুলাই থেকে অপেক্ষমান তালিকার দুই হাজার কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে। ক্রয় কাজ চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
এদিকে প্রথম তালিকা ইতিমধ্যে প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়ালে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় স্থান পাওয়া প্রতি কৃষক একটন করে ধান বিক্রি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তারা মণপ্রতি পাবেন একহাজার ৪০ টাকা।
কৃষকদের হয়রানি কমাতে এবার তালিকাভুক্ত কৃষকদের জন্য সুখবর দিয়েছে সরকার। টনপ্রতি ২৬ হাজার টাকার বিপরীতে কৃষকরা বিনা সুদে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নিতে পারবেন। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুযোগ বুঝে কৃষক গুদামে ধান দিবেন। আর গুদামে এসে কৃষক যেন হয়রানি না হন সেইলক্ষে এবার কৃষক নিজনিজ ইউনিয়ন পরিষদে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ধানের আদ্রতা মেপে ঠিক করে নিতে পারবেন।
তবে কৃষকদের অভিযোগ, লটারিতে কার নাম স্থান পেয়েছে; কবে থেকে ধান নেওয়া হবে তার কিছুই জানেন না তারা।
এদিকে লটারির তালিকা এখনো উপজেলা খাদ্য গুদাম চত্বরে সাঁটা হয়নি। ফলে আমন সংগ্রহের মত তালিকায় ভুয়া কৃষকের নাম স্থান পেয়েছে কিনা সেটা ভালভাবে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, রোহিতা ইউপির এক নম্বর (স্মরণপুর-পট্টি) ওয়ার্ডের তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে আমন সংগ্রহের তালিকার মত এবারও ওই ওয়ার্ডের তালিকায় কয়েকটি নাম স্থান পেয়েছে যাদের কেউ ধান চাষ করেননি।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, লটারির তালিকায় আমার ওয়ার্ডের ১৩ জনের নাম আছে। যারমধ্যে পাঁচ জন বোরো চাষ করেননি।
যদিও চলতি মৌসুমে প্রকৃত বোরো চাষিদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশনা রয়েছে সরকারের।
আমনে লোকসান হলেও এবারে শুরুতে ধানের দাম ভাল পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে সাতশ’ ৭০ থেকে আটশ’ ৮০ টাকায় মণপ্রতি ধান বিক্রি করতে পারছেন কৃষক। সরকার ক্রয় কাজ শুরু করলে খোলা বাজারে ধানের দাম আরো বাড়বে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
এদিকে খেদাপাড়া ইউপির সাত নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তায়জুল ইসলাম মিলন বলেন, কবে বোরো চাষিদের তালিকা হয়েছে বা লটারিতে ওয়ার্ডের কার কার নাম এসেছে তার কিছুই আমার জানা নেই।
মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান বলেন, ধানের আদ্রতা বেশি থাকায় এবং কৃষক আগ্রহী না হওয়ায় ধান ক্রয় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আবহাওয়া ভাল হলেই ধান ক্রয় শুরু হবে। বিষয়টি কৃষকদের জানান দেওয়ার জন্য আগামী সপ্তাহে মাইকিং করা হবে।
বোরো ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, লটারির তালিকায় স্থান পাওয়া কোন নামের ব্যাপারে অভিযোগ থাকলে তদন্তপূর্বক সেটা বাদ দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ধান ক্রয় করা হবে।