এ অবস্থায় দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী :ফখরুল

3
Spread the love

ঢাকা অফিস

ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ও তীরে এসে তরী ডোবার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, করোনা দুর্যোগ শুরুর পর সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে তৈরি হয়েছে দুর্র্ভিক্ষ অবস্থা। তাই জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে মহাদুর্যোগ মোকাবেলা সময়ের দাবি। অন্যথায় এর পরিণতির জন্য এককভাবে সরকারকেই দায়ভার বহন করতে হবে। সরকারকে কতগুলো প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে। এ সময়ে এসেও সরকার যদি মনে করে তারা আন্তরিকতার সঙ্গে জনগণের পাশে দাঁড়াবে, তাহলে কিছু পদক্ষেপ এখনও জরুরীভাবে তারা নিতে পারে। যদিও এরই মধ্যে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, সুষ্ঠুভাবে করোনা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য সম্পদশালী রাষ্ট্র হওয়াটা জরুরী নয়। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান এমনকি ভারতের কেরালা রাজ্যে আন্তরিকতা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং দরিদ্র মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরাসরি আর্থিক সহায়তা তুলে দেয়ার মাধ্যমে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কোথাও সরকারের অংশগ্রহণ নেই, আছে শুধু টেলিভিশনে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে আমরা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রয়েছি। অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলো এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারত দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল, বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষদের নিয়ে সমন্বিতভাবে সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশেও আমরা সব রাজনৈতিক দল মিলে এহেন জাতীয় সন্ধিক্ষণে ১৯৭১ সালের ন্যায় সম্মিলিতভাবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ মহাদুর্যোগ মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এহেন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতেও ঐক্যের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সরকার একদলীয় ভিত্তিতে কর্মকা- পরিচালনা করতে গিয়ে সবকিছ লেজেগোবরে করে ফেলেছে। এ পরিস্থিতির দায় এককভাবে বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে। ফখরুল বলেন, সারাদেশের মানুষ অস্থির এক যন্ত্রণায় ছটফট করছে। করোনার কারণে মৃত্যুর মিছিল জনমনে বিভীষিকাময় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। জাতি আজ মহাক্রান্তিকালের মুখোমুখি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা, সিদ্ধান্তহীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, চরম ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার প্রকট অভাব এ সঙ্কট গভীরতর করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস মহামারীতে অগ্রভাগের সৈনিক চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি সমবেদনা। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে তথ্যের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা শিকার হচ্ছে নজিরবিহীন দমনপীড়নের। সারাদেশের মানুষ অস্থির এক যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

ফখরুল বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৩ মে সুস্থ হওয়াদের সংখ্যা এক লাফে ১৭৭ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬৩ জন কিভাবে হলো? ওইদিন তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, কিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির দেয়া নতুন গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়েছে। এদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির এহেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রোগ পরীক্ষার মূল সমন্বয়ের দায়িত্ব থেকে আইইডিসিআরকে সরিয়ে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে। হঠাৎ পরীক্ষার দায়িত্বে বড় পরিবর্তনকে ঝুঁকিপূর্ণ, পরিকল্পনার অভাব এবং সমন্বয়হীনতার জের বলে আখ্যায়িত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফখরুল বলেন, করোনার নতুন পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা ও এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় খোদ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাই প্রশাসনিক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। করোনা টেস্ট কিটসহ সরবরাহকৃত মালামালের গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ করায় কমপক্ষে ২টি হাসপাতালের পরিচালক দু’জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারী অনুসন্ধানেই সরবরাহকৃত মাস্ক, পিপিই ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত হয়েছে এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষমা চেয়েছে। তাহলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো কেন? অথচ এ সকল ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক, পিপিই পরিধান করেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ৪১৯ জন ডাক্তার, ২৪৩ জন নার্স, ৩২৪ জন অন্য স্বাস্থ্য সেবাকর্মীসহ সর্বমোট ৯৮৬ জন কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে এবং দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। অপরদিকে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ন্যূনতম সুরক্ষা সামগ্রী নিয়েই সামনের সারিতে দেশের চিকিৎসক ও পুলিশ বাহিনী। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবা তাদের গ্রাস করছে।