সারাদেশে দ্রুত বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আরেক দফায় সাধারণ ছুটি বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন, এই দফায় আগামী ১৬ মে পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ছে। আমরা জানি, ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে কয়েক দফায় আগামী ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ চলমান।
এই ছুটির মূল উদ্দেশ্যই ছিল, মানুষকে নিজ নিজ ঘরে রেখে করোনাভাইরাসের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। শুধু তাই নয়, এ জন্য সব ধরনের অফিস-আদালত-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে উপাসনালয়, গণপরিবহনসহ বলতে গেলে সব কিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সরকারের সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়নি। কেননা অনেকক্ষেত্রেই মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি কিংবা মানুষ ঘরে থাকেনি। এমন কি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নামিয়েও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। শুধু কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকানসহ জরুরিসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার কথা থাকলেও মানুষ নানান অজুহাতে ঘর থেকে বের হয়েছে এবং হচ্ছে।
আর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২৬ এপ্রিল থেকে আবার ‘সীমিত পরিসরে’ আর ‘স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে’ তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে অন্য চিত্র। মালিকরা কথিত সীমিত পরিসর বা স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে নয়, পুরো মাত্রায় কারখানার কার্যক্রম শুরু করেছে, ঠিক আগের মতো করেই। যদিও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বিবেচনা করে এভাবে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বলেছিলেন, এতে ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। তাদের সেই শঙ্কা এরই মধ্যে কিছুটা সত্যি হতে শুরু করেছে।
ঢাকা-সাভার-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই অবস্থায় শুধু ছুটি বাড়িয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কতটা সাফল্য আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এটা ঠিক, মানুষকে ঘরে থাকতে বললেই তাকে ঘরে রাখা যায় না। সে জন্য কিছু দায়ও থাকে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য অন্তত প্রতিদিনের খাবার নিশ্চিত করা। সরকার কিছুটা চেষ্টাও করেছে। কিন্তু বহু মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি। দীর্ঘদিন আয় না থাকায় বহু মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে খাদ্যের সন্ধানে।
এমন বাস্তবতায় আমরা মনে করি, শুধু ছুটি বাড়িয়েই কারোনাভাইরাস ঠেকানো সম্ভব না। এ জন্য মানুষকে অবশ্যই ঘরে রাখতে হবে। এটাই এখন একমাত্র উপায়।