আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে স্মরণীয় দিনটি সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হয়ে আসছে। শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কর্মসময়ের দাবি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, আইএলও সনদেও এটা অনুমোদিত। শ্রমিক শ্রেণির লাগাতার সংগ্রামের অন্যতম ট্রিগার পয়েন্ট ১ মে দিনটিকেই শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ও বিজয়ের প্রতীকী দিবস হিসেবে ধার্য করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে এ দিনটি ১৮৯০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। ২০২০ সালে যখন মে দিবস পালিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা ভালো নয়। করোনায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। আর এটার বড় ধাক্কা লেগেছে তৈরি পোশাক খাতে। বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ মিছিল করছে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য মালিকপক্ষ একাধিক দিন ধার্য করলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। গার্মেন্টস খাতে প্রতিবছর রপ্তানি আয় প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার হলেও কেন তারা শ্রমিকদের এক মাসের বেতন নিশ্চিত করতে পারল না- এমন প্রশ্ন সামনে আসছে। বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ জোগান দেয় এই খাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকটকালীন শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এমতাবস্থায় প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকদের চাকরি নিরাপত্তা, বেতনের নিশ্চয়তা। দেশের বর্তমান দুর্যোগময় করোনা পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সামাজিক অসন্তোষ দেখতে চাই না। আমাদের দেশে শ্রমিকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত নয়, নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে উপেক্ষিত। অনেক কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীন ও ন্যায্য মজুরিবঞ্চিত। দেশের সবচেয়ে শ্রমঘন শিল্প গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারিত হলেও সর্বক্ষেত্রে তা অনুসৃত হচ্ছে না। অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রের অবস্থা আরো নাজুক। বহু প্রতীক্ষার পর দেশে একটি শ্রম আইন প্রণীত হয়েছে যেখানে কৃষি শ্রমিকরা স্বীকৃতি পেয়েছেন। মহিলা ও পুরুষ গৃহকর্মীদেরও শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার নীতিমালা হচ্ছে। এগুলো আশার কথা। তবে এর বাইরেও অধিকার বঞ্চিত রয়ে গেছেন অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকরা। শিল্পক্ষেত্রে সুস্থ অবস্থা তৈরির জন্য ও শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও উন্নত জীবনমানের নিশ্চয়তা দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যাশা- শিল্প মালিক, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই অঙ্গীকারাবদ্ধ হবেন যে, সুস্থ শিল্প বিকাশের স্বার্থে শ্রমিকের মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। অন্যতম প্রধান শ্রম খাত গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। দেশের অর্থনীতির আরেকটি বড় নিয়ামক বিদেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রবাসে এবং স্বদেশে ওই শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।