ঢাকা অফিস:
দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ৫৬৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৭ হাজার ৬৬৭ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৬৮ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ আক্রান্ত ৭৭ জন কম। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৪১ জন। গতকালের চেয়ে আজ নমুনা পরীক্ষা কমেছে দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় দেশে আরও ১০ জন করোনামুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৬০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। এরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৬২৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৪ হাজার ৭০৬টি। আমাদের নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৯৬৫টি। আগের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ৪ হাজার ৯৬৮টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা প্রায় দশমিক ০৬ শতাংশ কম। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৬৬টি।’
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যে পাঁচ জন মারা গেছেন, তার মধ্যে পুরুষ তিন জন এবং নারী দুজন। মৃতদের মধ্যে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দু’জন এবং ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিন জন।
ঢাকায় হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ৯৫ জন। এ পর্যন্ত এসব হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৫৬ জন এবং এ পর্যন্ত চিকিৎসা পেয়েছেন ১ হাজার ৭৩১ জন বলে তিনি জানান।
নাসিমা সুলতানা জানান, সবমিলিয়ে দেশে এখন ২৯টি সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। প্রতিদিনের বুলেটিনে সবগুলোর ফলাফল জানানো হবে।
তিনি জানান, ‘নতুন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ এবং বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতাল (সাবেক অ্যাপোলো) নমুনা পরীক্ষা শুরু করেছে। স্কয়ার ও ইউনাইটেড হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ শুরু হলেও এখনো রিপোর্ট আসেনি। এছাড়া ইতোমধ্যে ল্যাবএইড, ইবনে সিনা, তায়েরুন্নেসা মেমোরিয়াল হাসপাতাল (টিএমএমএস) ও রেফায়েতউল্যাহ হাসপাতালও নমুনা পরীক্ষার আবেদন করেছে। আবেদনগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে এবং শর্তসাপেক্ষে দুই-একদিনের মধ্যে তাদেরও অনুমোদন দেয়া হবে। নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবের যে শর্ত দেয়া হয়েছে তা পূরণ করতে পারলে যে কোনো বেসরকারি হাসপাতালকে অনুমোদন দেয়া হবে।’
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৩৮ জনকে, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশনের সংখ্যা ১ হাজার ৪২০ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৮ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ৮৯১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৬৭ জনকে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৪৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে ১১৫ জনকে। এ নিয়ে ৯ হাজার ২৭৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে আছেন ২ হাজার ১৮২ জন, এখন পর্যন্ত মোট কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৯ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ৭৮২ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৭ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭১ হাজার ৪৮২ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৭৩৮টি। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৩ হাজার ৯৪৪টি। ঢাকা সিটির বাহিরে শয্যা রয়েছে ৫ হাজার ৬৯৪টি। আর দেশে আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩৪১টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি।
তিনি জানান, সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৬৩৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেয়া যাবে।
জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ২৪ হাজার ৮২৫টি। বিতরণ হয়েছে ৫০ হাজার ৭২০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৩৭টি। বিতরণ করা হয়েছে ১৪ লাখ ৩ হাজার ৩৯৮টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৯টি মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ৭২ হাজার ১৭৬ জনকে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬৭ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ও ওয়েবসাইটে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৩ হাজার ৬৬৫ জন এবং এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ১৩০ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৫২১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আরও ৮ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২২ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১৯৭ জনসহ মোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৬ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।