টেকনাফে পঙ্গপাল সদৃশ পোকার আক্রমণ

1
Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফে ‘পঙ্গপাল’ সদৃশ পোকার আক্রমণে আম গাছসহ বেশ কয়েকটি ফল গাছের পাতা নষ্ট হতে চলেছে। পোকাটি দেখতে অনেকটা পঙ্গপালের মতো। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বাড়ির মালিক।

অবশ্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি পঙ্গপাল না হলেও ক্ষতিকর পোকা। এটি দমনে কিটনাশক স্প্রে করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল সিকদারের লম্বরী গ্রামে বাড়ির আম গাছে এক সপ্তাহ আগে শত শত পোকা হানা দেয়। আম গাছসহ অন্যান্য বেশকটি গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও শাখা ছাড়া কোন পাতা নেই। আবার কোথাও কোথাও পাতা ঝলছে গেছে।

সোহেল সিকদার বলেন, ‘আম গাছ, লতা-পাতা, আগাছা থেকে শুরু করে শুকনো পাতা, কাঁচা পাতা ও গাছের শাখা-প্রশাখায় সারি সারি পোকা। একটা আম গাছের নিচে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পোকা দূর করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। বরং দিন দিন পোকার সংখ্যা বাড়ছে। কোথাও গাছের শাখা আছে পাতা নেই। আবার কোথাও পাতা ঝলসে গেছে। ’

পোকার আক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কক্সবাজার থেকে কৃষি কর্মকর্তা এসে পোকাগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তারা জানিয়েছেন এ ধরণের পোকা তারা আগে কখনও দেখেননি।

টেকনাফ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, পোকার ছবি কক্সবাজার জেলা অফিসে পাঠিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি পঙ্গপাল নয়। পঙ্গপালের পাখা থাকে এবং সহজে উড়তে পারে। এটির তেমন পাখা দেখা যায়নি এবং এদিক-ওদিক লাফাতে পারে। তবে যেহেতু কাঁচা পাতা খেয়ে ফেলছে তাই এটি ক্ষতিকর পোকা। এসব পোকা যাতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য কিটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কালো রঙের ডোরাকাটা এই পোকাগুলো দেখতে অনেকটা পঙ্গপালের মতো বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন। পোকাগুলোর ছবি দেখে তিনি ধারণা করছেন, এগুলো স্খিস্টোসার্কা গ্রেগারিয়া প্রজাতির পঙ্গপাল। যেগুলো বেশ বিধ্বংসী হয়ে থাকে।

অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, একটি পঙ্গপালের জীবনচক্র খুব দ্রুত প্রায় তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় তারা বেশি বেশি বংশবিস্তার করে। পঙ্গপালের জীবনচক্রের তিনটি ধাপ থাকে, ডিম, নিম্ফ এবং পূর্ণাঙ্গ। টেকনাফে যে পোকাগুলো দেখা গেছে, সেগুলোর পাখা থাকলেও কোনটা উড়তে পারে না। এরা পাতা থেকে আরেক পাতায় লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।

রুহুল আমিন ধারণা করছেন পঙ্গপালগুলো হয়তো নিম্ফ পর্যায়ে রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এগুলোর পাখা গজাতে পারে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানিয়েছেন, তারা এখনও নিশ্চিত নন এটি পঙ্গপাল কিনা। তাই এখনও তারা কোন ধরণের মনিটরিং শুরু করেননি।

টেকনাফে যে পোকাটি পাওয়া গেছে সেটার বৈশিষ্ট্য দেখে আফ্রিকায় আঘাত হানা ভয়াবহ পঙ্গপাল বলে মনে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান। তারপরও এই পোকার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দুই একদিনের মধ্যে টেকনাফে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে দেশব্যাপী লকডাউন চলায় তারা পোকাটির নমুনা গাজীপুরের ল্যাবে এনে পরীক্ষা করতে পারছেন না। লকডাউন ওঠার আগ পর্যন্ত তিনি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে এই পোকাটিকে শুকিয়ে ন্যাপথালিন দিয়ে অথবা ৭০% ইথানলে চুবিয়ে রেখে না হলে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এরই মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, আফ্রিকা মহাদেশের কৃষিজমিতে তাণ্ডব চালিয়ে ভারত-বাংলাদেশের দিকে আসছে পঙ্গপাল। সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, করোনা সংকটের মাঝেই আরও একটি দুর্যোগর মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

শস্যখেকো এই পোকার দলের সম্ভাব্য আক্রমণের খবর দিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

আফ্রিকার পূর্বতম অঞ্চলে এক ঝাঁক পঙ্গপাল মরু অঞ্চলের আরেক ঝাঁক পঙ্গপালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এসব পঙ্গপালের একটি দল ইয়েমেন, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, ইরান, সৌদি আরব ও পাকিস্তান হয়ে ভারতেও হানা দিতে পারে। ইতিমধ্যে ভারতের পাঞ্জাব ও হারিয়ানা রাজ্যে ঢুকে পড়েছে একদল পঙ্গপাল।

পঙ্গপালের আরেকটি দল ভারত মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে। ভারতের কৃষিজমিতে আক্রমণ করার পর এ দলটি বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে। এই অঞ্চলে পঙ্গপালের এ দুই দল ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে; এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

পঙ্গপাল আর ঘাসফড়িং দেখতে একই রকম। দল বেঁধে উড়তে উড়তে পঙ্গপাল পাড়ি দিতে পারে মাইলের পর মাইল। দুটো ক্ষুদে শিংওয়ালা এই পতঙ্গটি আধা থেকে তিন ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যমতে, এই সময় এরা ‘দানবের মত ক্ষুধার্ত’ হয়ে ওঠে। একেকটি পতঙ্গ প্রতিদিন নিজের ওজনের সমান ফসল খেতে পারে। এই পোকার দলের আক্রমণের কারণে উজাড় হতে পারে ক্ষেতের ফসল। তবে পঙ্গপালের মাধ্যমে মানুষ ও প্রাণী আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এখনও নেই।