বাসা ভাড়ার বাড়তি চাপ কমাতে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব

4
Spread the love

– হাসিনা আকতার নিগার

এপ্রিল মাস শেষ প্রায়। মানুষের অফিস, ব্যবসা লকডাউনে। কিন্তু থেমে নেই খরচ।  মাস শেষের আগেই চিন্তা শুরু হয় বাড়ি ভাড়া নিয়ে। করোনাভাইরাসের লকডাউনের সময়ও একই চিন্তা। না খেয়ে থাকা যাবে। কিন্তু বাড়ি ভাড়া কী হবে? এ সমস্যার কোনো সমাধান আসেনি এখনও সরকারী বেসরকারিভাবে। যদিও দু একজন বাড়ির মালিক নিজ দায়িত্বে বাড়ি ভাড়া মওকুফ করেছেন। সাধুবাদ তাদের।  তবে ব্যতিক্রম কোন উদাহরণ নয়। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে। করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য বাংলাদেশ সরকার  নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে  ইতিমধ্যে। বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের জন্য সদা সচেষ্ট। উন্নত বিশ্ব জনগণের চিকিৎসা,জীবনযাত্রা সামলাতে গিয়ে  যেখানে হিমসিম খাচ্ছে, সেখানে নানা প্রতিকূলতার মাঝে বাংলাদেশ যা করছে তা  সম্ভব হচ্ছে  জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার কারণেই।  দেশের জনগণের একমাত্র ভরসার স্থল হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

শহুরে জীবনে প্রায় ৮০ভাগ মানুষ বাস  করে ভাড়া বাড়িতে।  সব পেশার মানুষের কাছে বাড়ি ভাড়া চিন্তনীয় বিষয়। আয়ের  সিংহ ভাগ  চলে যায় বাড়ি ভাড়া বাবদ। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাড়ি ভাড়া।  ভাড়াটিয়া আইন তেমনভাবে মানা হয় না দেশে। সে কারণে কোভিড-১৯ এর মহামারির সময় বাড়ির মালিক  এক মহিলাকে বের করে দিতে পেরেছে। যদিও পরে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে তার বিরুদ্ধে। মানুষ এখন লকডাউন পরবর্তী সময় নিয়ে আছে সংশয়ের মাঝে। অর্থনৈতিক মন্দা সারা বিশ্বকে গ্রাস করবে। তাই ব্যয় সংকোচনের কথা বলা হচ্ছে বারবার। কোভিড-১৯ মানুষকে ঘরবন্দি করেছে। একই সাথে  ঘরহারা করার সম্ভাবনাতে দিশেহারা করে তুলেছে । কাজ না থাকলে বাড়িভাড়া দেয়া সম্ভব হবে না। বাড়ির মালিক বেশি দিন অজুহাত মানতে চাইবে না। যার কারণে  বাড়ি ভাড়ার সমস্যাটি সমাধানের জন্য  বিভিন্ন সংগঠন, সমাবেশ,  সামাজিক ও গণমাধ্যমে  বিবৃতি দিয়ে  সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি ব্যক্তি মালিকানাধীন বিষয়। সেখানে হয়তবা সরাসরি ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত সরকাররে পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। ভাড়াটিয়ার যেমন সমস্যা রয়েছে তেমনি বাড়ির মালিকের ও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তা মানতে হবে সকলকে। সব বাড়ির মালিক বিত্তশালী তা কিন্তু নয়। অনেকের আয়ের উৎস কেবল বাড়ি ভাড়া। তাই ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিক উভয়ের দিক বিবেচনা করে সরকার বিশেষ কিছু  পন্থা অনুসরণ করতে পারে। যা অন্যান্য সেক্টরের মত নির্দেশ আকারে পালনীয় হবে উভয় পক্ষের জন্য। বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্কেল নেই দেশে। বাড়ির মালিক তার খুশি মত ভাড়া নির্ধারণ করে থাকেন। এলাকাভেদে ভাড়ার মাত্রা কম বেশি হয়। তাই দেখা যায় অফিস, স্কুল কলেজের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে মানুষ সুবিধাজনক স্থানে বাড়ি ভাড়া নেয়। এতে করে   আয়ের বেশি অংশ বাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ হয়ে যায় । কোভিড-১৯  এর লকডাউনকালীন সময় কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে। তাই এখন  অন্য সকল চাহিদাকে উহ্য রেখে কেবল খাবার যোগাড়ের  চিন্তা  সকলের। অনেক বেসরকারি  চাকরিজীবী আগামী মাসে বেতন পাবে  কিনা তা নিয়ে  সন্দিহান। বেশ কিছু গার্মেন্টস লে অফ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই করছে অনেকে। দোকান মার্কেট বন্ধ বলে কর্মচারীদের  চাকরি চলে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে গেলেও তাদের মেসের ভাড়া দিতে হবে। কারণ মেস ছেড়ে দিলে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে থাকার সমস্যা হবে। এ অবস্থায় বাড়ি ভাড়া দেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এ সকল বিষয় বিবেচনা  করে  সরকার  বাড়ির মালিকদের ব্যয়ের খাতে বিশেষ সুবিধা দিয়ে, ভাড়াটিয়াদের ভাড়ায়  ছাড় দিতে নির্দেশ দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে  বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়াদের অবস্থাভেদে  আপদকালীন সময়ে বাড়ি ভাড়া  সর্ম্পূণ বা অর্ধেক করে দিতে পারে। তার সমর্থনে সরকার বাড়ির মালিককে আয়কর, চলমান গৃহ ঋন, হোল্ডিং ট্যাক্স ও অন্যান্য সারচার্জ আংশিক বা সম্পূর্ণ ছাড় প্রদান দেবার ঘোষণা দেবার বিষয় বিবেচনা করতে পারে। তাহলে বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে না। এ ছাড়া  সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায়  শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়ার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া  প্রয়োজন। তাহলে বাড়ির মালিকরা  ভাড়াটিয়াদের ভাড়া ছাড় দেয়াতে উৎসাহিত হবে।

সরকার  জনগণকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত করে  নতুন জীবন দিতে চায়। আর সে জীবনে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য আগাম ভাবনা হতে হবে বাস্তবধর্মী। যা কার্যকর করতে হবে সরকার ও ব্যক্তির সম্মিলিত প্রয়াসে। তা না হলে এগিয়ে চলার পথ হবে রুদ্ধ।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক খুলনাঞ্চল-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)