ঢাকা অফিস
অতি-সংক্রামক ব্যাধি নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ ঠেকানোর নানা প্রচেষ্টার মধ্যে রাজধানীতে আরেক আতংক হয়ে এসেছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। করোনায় স্থবির জনজীবনে নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ না ছিটানোর কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মশা। ফলে করোনার দুর্দিনে ঘরবন্দি মানুষের কাছে খাঁড়ার ঘায়ের মতোই এখন ডেঙ্গুর আতংক। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শয়ে শয়ে বেড়ে এখন সাড়ে চার হাজারের ঘরে। সংক্রামক হওয়ার কারণে করোনাভাইরাসের চিন্তায় সবার ঘুম হারামের জোগাড়। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মানুষ। এই অবস্থায় মশা নিধনের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ডেঙ্গুপরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
গতবছর দেশের মানুষের কাছে আতংকের নাম ছিল ডেঙ্গু । তোলপাড় করা ডেঙ্গুতে সরকারি হিসাবেই ১৭৯ জনের প্রাণহানির কথা বলা হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমে আসা খবরে সেটি অন্তত ৩০০। আর হাসপাতালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছিলেন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১৩১ জন। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে গত বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে শুক্রবার (২৪এপ্রিল) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৯১ জন। এদের মধ্যে ২৮৯ জনই হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গুচিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুইজন ডেঙ্গুরোগী। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরে ডেঙ্গুতে কিংবা ডেঙ্গুসন্দেহে কোনো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৯ জন। আর ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জনে ও মার্চ মাসে ২৭ জন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
মার্চ মাস থেকেই ডেঙ্গুপ্রতিরোধে কর্মসূচি শুরু করার কথা। কিন্তু সিটির করপোরেশনের কর্মীদের এখন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা জীবানুমুক্ত করার কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের মধ্যে ডেঙ্গুনিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মনোযোগ কমেছে। যেকারণে বিশেষজ্ঞরা সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন। বর্ষার আগের এই সময় রাজধানীতে এডিস মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগের তাগিদ দিয়েছেন তারা। এ অবস্থায় দফায় দফায় ওষুধ ছিটানোর আগে রাজধানীর খালসহ মশার প্রজনন ও উৎপত্তিস্থল পরিষ্কার করারও পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম এ নিয়ে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন। এডিস মশার উপদ্রব কমাতে সবার আগে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার ওপর জোর দিচ্ছেন উত্তরের এই মেয়র। তিনি বলছেন, ‘মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসের জন্য অবশ্যই সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেতে হবে। এজন্য আমি রাজউক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার সাথে বসে আলোচনা করেছি, যেন তারা এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করে।’ গতবছর ডেঙ্গুসচেতনতা তৈরীতে ভূমিকা রাখা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাদানের সঙ্গে জড়িতদের দিয়ে ডেঙ্গুবিষয়ে সচেতনতামূলক কাজ করানো হতো। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এবার তাদের যুক্ত করা হচ্ছে। স্কুলগুলোতে আগে পরামর্শ ও সচেতনতামূলক কাজ করা হতো, তা এখন করা যাচ্ছে না। কারণ সবকিছু বন্ধ। সেক্ষেত্রে এবার প্রেেকাপ শুরু হলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
এদিকে মশক নিধন ও ডেঙ্গুপ্রতিরোধে কীটনাশক সহজলভ্য করতে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে আমদানির অনুমতি চেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কীটনাশকের মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বিধানের শর্তে আপাতত দুই সিটি করপোরেশনকে কীটনাশক আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আইইডিসিআরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর শাহনিলা ফেরদৌসী জানান, ৪৯১টি উপজেলায় ডেঙ্গুপরীক্ষার ৪৩ হাজার কিট পাঠানো হয়েছে। নতুন চিকিৎসকদের ডেঙ্গুরোগীদের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা কর্মীদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী যদি ডেঙ্গুতেও আক্রান্ত হন, তাহলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এজন্য সতর্কতার সঙ্গে রোগি দেখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’