স্টাফ রিপোর্টার:
করোনাভাইরাস দুর্যোগের মধ্যে সস্তায় পণ্য কিনতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর ট্রাকের সামনে প্রতিদিনই ভিড় হচ্ছে। তাই লাইনে সামনের দিকে জায়গা পেতে আগেরদিন সন্ধ্যা থেকেই চলে স্থান দখলের প্রতিযোগিতা। স্তুপ করে রাখা টায়ার নিয়ে লাইনে রেখে ও তার মাঝখানে সড়কের ওপর নিজের নাম লিখে এ দখল প্রক্রিয়া চলে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে টায়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ থেকে টিসিবি জনগণের মধ্যে নায্যমূল্যে ডাল, তেল, চিনি ও পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। পেঁয়াজ বিক্রয় শেষে বাকি তিনটি পণ্য বিক্রি চলমান রেখেছে টিসিবি। আর ১৩ এপ্রিল থেকে বিক্রি পণ্যের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয় ছোলা। প্রতি কেজি ছোলা ৬০ টাকা দরে কিনছেন ক্রেতারা। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ তিন কেজি ছোলা কিনতে পারছেন। সরকারি ছুটির দিনেও বিক্রি করা হচ্ছে এসব পণ্য। তবে প্রথম থেকে কোনোভাবেই করোনা ভাইরাস বিস্তার প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না। ট্রাক সেল থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মাইকিং, নির্দিষ্ট দূরত্ব চিহ্নিতকরণের দাগ দেওয়া, গোল চিহ্ন দেওয়া, এমনকি নির্দিষ্ট দূরত্বে অব্যবহৃত ভ্যান, সাইকেল, রিকশার টায়ার দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। মহানগরীর শিববাড়ী মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শহিদ হাদিস পার্কের সামনে, ডিসি অফিসের মোড়, নতুন বাজার এলাকাসহ অন্যান্য জায়গায় পুলিশের হস্তক্ষেপে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রচেষ্টা রয়েছে।
বুধবার দিনগত সন্ধ্যায় নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকায় দেখা যায় টায়ার সাজানো। একইসঙ্গে বিভিন্ন টায়ারের মাঝে সড়কের ওপর নাম লেখা, ইট দিয়ে রাখা, কেউবা আবার তরমুজ দিয়ে রেখেছেন। রিকশাচালক হাবিব বলেন, ‘গত ৩ দিন ধরে লাইনের শেষে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাক পর্যন্ত যাওয়ার আগেই পণ্য শেষ হয় যাচ্ছে। বুধবার রাত ৮ টার দিকে এখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি লোকজন টায়ার সাজাচ্ছে। কেউ কেউ নামও লিখে রাখছে। এ অবস্থা দেখে আমিও একটা টায়ার রাখলাম এবং মাঝে একটা তরমুজ দিয়ে রাখলাম।’ শেখপাড়ার বিউটি বেগম বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে সকাল ৮টায় এখানে এসেই দেখি লম্বা লাইন। আর শুনি সবাই নাকি ভোর রাত থেকে লাইনে থাকে। তাই সন্ধ্যায় বের হয়ে আসলাম। আর দেখি অনেকেই টায়ার সাজিয়ে রেখেছেন। আমিও তাই নাতিসহ দুই জনের জন্য টায়ার সাজিয়ে রাখলাম।’ টিসিবি পণ্য কেনা সোহেল হোসেন বলেন, ‘এখন বাইরে বের হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়। আর বিক্রয়ের স্থানে পুলিশের উপস্থিতি থাকায় কেউ চাইলেও বিশৃঙ্খলা করতে পারে না।’
টিসিবি খুলনা আঞ্চলিক প্রধান রবিউল মোর্শেদ বলেন, ‘ট্রাক সেলের স্থানে মাইকিং, দাগ কাটা, গোল দেওয়া এমনকি টায়ার দিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা না মানায় বর্তমানে বিক্রির স্থানে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকছে। আর এ কারণেই ক্রেতারা আগে থেকেই লাইনের জায়গা দখলে রাখার চেষ্টা করে থাকতে পারে।’