জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃতদের ১০ শতাংশ করোনা আক্রান্ত ছিল

5
Spread the love

খুলনাঞ্চল রিপোর্ট

সারা দেশে গত ১৭ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করোনার উপসর্গ, যেমন, জ্বর, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ শতাংশের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত ১৭ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত  জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও ডায়রিয়া নিয়ে মারা যান ১৮০ জন। এরমধ্যে ১২৮ জনের শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে এমনটি নিশ্চিত হয়েছে বাংলা ট্রিবিউন। ১২৮ জনের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মৃতের শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ৫ শতাংশের ফলাফল এখনও জানা যায়নি। বাকি ১০ শতাংশ করোনা আক্রান্ত ছিলেন।

মৃত্যুর পর করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া ১৩ জনের ৩ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দা, দুই জন নোয়াখালীর, একজন করে ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, গাজীপুর, বরগুনা ও জামালপুর জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, একজন  নারী এবং একজনের ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। বয়স পর্যালোচনায় এই ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনই ত্রিশোর্ধ্ব বয়সী। একজনের ক্ষেত্রে বয়সের তথ্য পাওয়া যায়নি। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যক্তি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বিদেশ থেকে ফিরে সেসব এলাকায় গিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদের আটকানো গেলে হয়তো দেশের অন্যান্য জেলায় সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হতো।

হঠাৎই বাড়ে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর সংখ্যা:

গত ১৭ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৯টি জেলার শতাধিক উপজেলায় জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি  ও ডায়রিয়া নিয়ে মারা যান ১৮০ জন। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করে বাংলা ট্রিবিউন গবেষণা বিভাগ। পরবর্তীতে এসব জেলার সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মারা যাওয়া ১৮০ জনের মধ্যে ১২৮ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে ১৩ জনের নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মেলে, যা মোটের ওপর ১০ শতাংশ। ৮৫ শতাংশের অর্থাৎ ১০৯ জনের নমুনায় করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। ৫ শতাংশের অর্থাৎ ৬ জনের করোনা টেস্টের ফল এখনও পাওয়া যায়নি।

নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি ৫২ জনের শরীর থেকে:

গবেষণায় পর্যালোচিত ১৮০ জনের মধ্যে ৫২ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। যাদের মধ্যে ২২ জনের ক্ষেত্রে প্রশাসন জানতে পারেনি বা যথাসময়ে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। কখনও নমুনা সংগ্রহ করতে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাওয়ার আগেই মৃতদেহ দাফন করে দেয় স্বজনরা। ৩০ জনের ক্ষেত্রে উপসর্গের বিবেচনায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। ফুসফুসজনিত এসব অসুখের পর্যালোচনায় দেখা যায়, মার্চ মাসের শেষদিক থেকে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

মৃতদের বেশিরভাগ পুরুষ:

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মৃতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ পুরুষ, ২০ শতাংশ নারী এবং ৫ জনের ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।

মৃতদের বয়সের গড়:

করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃতদের মধ্যে ১৬১ জনের বয়সের তথ্য পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ৪ শতাংশ অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সী। ৬ শতাংশের বয়স ১০ বছর থেকে অনূর্ধ্ব ২০ বছর। ১৪ শতাংশ ২০ থেকে অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী। ১৪ শতাংশ ৩০ থেকে অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়সী। ২০ শতাংশ ৪০ থেকে অনূর্ধ্ব ৫০ বছর বয়সী এবং ৪২ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি।

যেভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন মৃত ব্যক্তিরা:

গত ৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মকবুলপুরে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক যুবক জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে মারা যান। মৃত্যুর পরে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে পরবর্তী সময়ে নিশ্চিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মো. একরাম উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই যুবক মালয়েশিয়া থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছিল। তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের আরও চার জন আক্রান্ত হয়। তারা চিকিৎসাধীন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ থেকে একজন নারী পোশাক শ্রমিক এসেছিলেন। তিনিও মারা গেছেন। এভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, এক প্রবাসীর কারণে এখন পুরো এলাকার মানুষ আক্রান্ত বা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে। এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও ঝুঁকি রয়েছে।

অন্যান্য জেলায়ও এই চিত্র দেখা গেছে। প্রবাসী অথবা পোশাক শ্রমিক দ্বারা ওইসব জেলায়ও সংক্রমিত হয়েছে। যেসব জেলায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং বিদেশ থেকে বেশি মানুষ প্রবেশ করেছে, সেসব জেলাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

মৃত্যুর পরেই নেওয়া হয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা:

অনেক মানুষের মৃত্যুর পর স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে পরিবারের মানুষদের কোয়ারেন্টিন করে। বিশেষ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উপসর্গ ও ভ্রমণ ইতিহাস বিবেচনায় বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামও লকডাউন করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত:

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ভাইরাসটি ছড়ায় মানুষের মুভমেন্টের ওপর। আক্রান্ত মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মুভমেন্ট করলে তিনি এই ভাইরাসটি বহন করে নিয়ে যান। আমরা প্রথম থেকে এই মুভমেন্ট ঠেকাতে পারিনি। এজন্য দেশের বেশ কয়েকটি জেলা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। লকডাউন নিশ্চিত করতে পারলে এবং বেশি সংখ্যক টেস্ট করতে পারলে আক্রান্তদের আইসোলেশনে নেওয়া যেতো। তাহলে আক্রান্ত কমে আসতো। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। আক্রান্তদের শনাক্ত করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।’