শাহজাহান সিরাজ, কয়রা:
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা সুন্দরবন ঘেরা কয়রায় লবণাক্ত পতিত মাঠে মাঠে এখন সূর্যমুখীর চাষ। উপজেলায় প্রথম বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সৃূর্যমুখী। মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে বারি সরেজমিন গবেষণা বিভাগের অর্থায়নে সূর্যমুখীর চাষ করানো হয়েছে। এসব জমিতে বারি ২ ও ৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। জমির ৮৫ শতাংশেই ফুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে শতভাগ জমিতেই ফুল ধরা ও বীজ পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। তারা বলেন, আমন মৌসুমে ধান লাগানোর পর জমি গুলো পড়ে থাকতো। সে সব জমিতে সরেজমিন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বড় অফিসার কয়রার সন্তান ড. হারুনর রশীদের সহযোগিতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে। এ চাষে ভালো ফলন দেখে এলাকার অন্য কৃষকদের মধ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ বলছে, এতে অনাবাদী জমির পরিমাণ কমার পাশাপাশি পূরণ হবে স্থানীয় সূযৃমুখী তেলের চাহিদা।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন সূর্যমুখী প্রদর্শনী জমিতে গিয়ে দেখা যায়, এক একটি ফুল যেন হাসি মুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। চারদিকে হলুদ ফুলের সমারোহে একটি নয়নাভিরাম দৃশ্য। এটি যেন একটি ফসলী জমি নয়, এক দৃষ্টি নন্দন বাগান। মাঠের দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায় ভোজ্য ফসল সূর্যমুখীর বাহারি শোভায়। ফুলের মাঠে মৌমাছি পাখির আনাগোনা বেশ। সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃিতপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। দলে দলে তারা ছুটে চলেছেন এসব বাগানে। কেউ কেউ আবার ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে পোষ্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর বাগানগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় উপচে পড়ে। সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে সূর্যমুখী ফুলের হাসির সঙ্গে সঙ্গে রঙিন হয়েছে কৃষকের মুখ। কয়রায় আমাদী ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রাম, মহারাজপুর, উত্তর বেদকাশি ও ২ নং কয়রার লবণাক্ত পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে সফল হয়েছে সরেজমিন গবেষণা কৃষি বিভাগ।
কথা হয় উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের সুভাস ও ২ নং কয়রা গ্রামের শফি শেখের সঙ্গে। সুভাস বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। ২৫/৩০ বছর ধরে লবণাক্ত এ জমি পড়ে থাকতো। আমন ধান ছাড়া আর কোন ফসল এখানে হত না। সরেজমিন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সূর্যমুখী ফুল চাষের পরামর্শ দেয়। তারাই জমির চাষাবাদের খরচ, সার, বীজ, কাীটনাশক ও বেড়া দেওয়ার জন্য জাল দিয়েছে। এছাড়া সব সময় যে কোন সহযোগিতা করছে। যে কারনে বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে ফলন ভালে দেখে এখন আশেপাশের অনেক কৃষকই সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। অথচ এসব চাষীরাই প্রথম পর্যায়ে আমাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন।
বাংলাদেশ সরেজমিন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান বলেন, কয়রায় এবার ১ হেক্টর লবণাক্ত জমিতে লবণ সহিষ্ণু সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। করোনা উপেক্ষা করেও নিয়মিত এলাকা পরিদর্শন করে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, এর আগে পরিক্ষামূলকভাবে উপজেলার কয়রা সদর ও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছিল। জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার বিএআরআইয়ের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প আওতায় এ গবেষণা কাজ টি পরিচালনা করছেন খুলনার সরেজমিন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হারুনর রশীদ।
ড. মোঃ হারুনর রশীদ বলেন, সূর্যমুখী একটি লবন সহিষ্ণু ফসল। দক্ষিণাঞ্চেলে আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ অঞ্চল পড়ে থাকে। মাটি ও পািিনতে লবন থাকায় সহজে কোন ফসল ফলানো কঠিন। সেখানে বিনা চাষে ডিপ্লিং পদ্দতিতে দুটি সেচ দিয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করা যায়। এটি একটি উৎকৃষ্ট তেল ফসল। সূর্য মুখীর তেল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর কোন অংশই ফেলা যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে এটি তৈল ফসল হিসেবে চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে পটুয়াখালী, রাজশাহী, যশোর,কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা,দিনাজপুর, গাজীপুর টাঙ্গাইল এ সীমিত চাষ হলেও খুলনাতে তেমন চাষ হয়না। এর বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক এসিড রয়েছে। এ তেলে কোন ক্ষতিকর ইবোসিক এসিড নেই। এজন্য হার্টের রোগীদের জন্য উপকারি। তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা দেশে যেন এক ইঞ্চি জায়গা খালি না থাকে, তারই ধারবাহিকতায় কয়রার লবণাক্ত জমিতে বিনা চাষে যাতে ফসল করা সে জন্য আলাদা গবেষণা করছি।