করোনা ভাইরাসের কারণে বিক্রি ও লেনদেনে অসুবিধা
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি:
চলতি গোলপাতা মৌসুমে সুন্দরবনে কোন বনদস্যু বাহিনীকে চাঁদা, মুক্তিপণ ছাড়াই গোলপাতা আহরণ করেছেন বাওয়ালীরা। ইতি মধ্যে গোলপাতা কাটা শেষ করে বাড়ি ফিরেছেন এর উপর নির্ভরশীল মালিক ও শ্রমিকরা। তবে করোনা ভাইরাসের কারনে বিভিন্ন মোকামে গোলপাতা বিক্রি ও অর্থ লেনদেন নিয়ে বাওয়ালীরা অসুবিধায় পড়লেও দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া গোলপাতা আহরণে খুব খুশি তারা। এদিকে গোলপাতা আহরণে পশ্চিম বনবিভাগের ২টি কূপে লক্ষ্যমাত্রা পূরন হয়নি বনবিভাগের।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা রেঞ্জের ২টি কূপে এবার গোলপাতা আহরণ মৌসুমে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মন। মৌসুমের শুরু থেকে বাওয়ালীদের বেশ কিছু শর্ত নিয়ে বিএলসি প্রদানে কঠোর ছিল বনবিভাগ। শর্তগুলোর মধ্যে ছিলো যেমন গোলপাতা ঝাঁড়ের মাইজপাতা ও ঠেকপাতা কোন ভাবেই কর্তন করা যাবে না, ৫০০ মনের বেশি ধারণ ক্ষমতার নৌকা বিএলসির বাহিরে থাকবে, গোলপাতার আড়ালে কোন ধরনের বনজ সম্পদ পাচার না করা, নির্ধারিত সময়ের বেশি বনে অবস্থান না করা ইত্যাদি শর্ত। যে কারনে খানিকটা দেরীতে হলেও সকল শর্ত মেনে বনবিভাগের ওই ২টি কূপ থেকে গোলপাতা সংগ্রহে ২৪০টি বিএলসির অনুকূলে বনে প্রবেশ করে এর উপর নির্ভরশীল কয়েক শত বাওয়ালীরা।
উপজেলার কালাবগী এলাকার বাওয়ালী আব্দুল কাদের শেখ জানান, তিনি ছোট বেলা থেকে সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। আর যতদিন তিনি বাঁচবেন একাজ করে যাবেন। কিন্তু বনবিভাগের এবারের মতো কড়াকড়ি তিনি আগে কখনো দেখেননি। তবে অন্যান্য বার বনে বেপরোয়া দস্যুদের মুক্তিপণসহ নানা অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠতেন। গতবারের ন্যায় এবারও বনে কোন বনদস্যু বাহিনীকে মুক্তিপণ, চাঁদা এবং কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া গোলপাতা আহরণ করেতে পেরে তিনি খুব খুশি। তার মতে এসব বর্তমান সরকারের প্রধান মন্ত্রীর নিরোলস প্রচেষ্টার কারনে দস্যু মুক্ত সুন্দরবন গড়ায় সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়ে করোনা ভাইরাসের কারনে বিভিন্ন মোকামে গোলপাতা ভাল দামে বিক্রি ও টাকা পয়সা লেনদেন নিয়ে নানা প্রকার অসুবিধায় পড়েছেন বলে জানান।
এপ্রসঙ্গে খুলনা রেঞ্জ গোলপাতা কূপ ও নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা শেখ আনিছুর রহমান বলেন, এই ২টি কূপে গত ২৮ জানুয়ারী থেকে বিএলসি নবায়নের মধ্য দিয়ে গোলপাতা মৌসুম শুরু হয় আর শেষ হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে।
এবিষয়ে খুলনা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) আবু সালেহ বলেন, বাওয়ালীরা যাতে বনের ভিতরে নির্ভয়ে গোলপাতা কাটতে পারে সে জন্য বিগত বছরের ন্যায় এবারও কটোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। চলতি মৌসুমে খুলনা রেঞ্জের ২টি কূপে গোলপাতার লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি। এবার ২৪০টি বিএলসির অনুকূলে ২৪০টি নৌকায় মোট ১লাখ ১৯ হাজার ৩০৪ মন গোলপাতা সংগ্রহ করে ইতি মধ্যে বাওয়ালীরা বাড়ি ফিরেছেন।
এব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল-মামুন জানান, এবছর কঠোর নজরদারি ছিল। তারপরও কিছু কিছু অনিয়ম হয়েছে। আর যারা করেছে তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি নিজেও কয়েকবার সুন্দরবনে গিয়ে নজরদারি করেছেন বলে জানান।