কোভিড-১৯ এক অদৃশ্য সন্ত্রাস, যা হানা দিয়েছে মানুষের অস্তিত্বে

3
Spread the love

-হাসিনা আকতার নিগার-

রাহুর গ্রাসের কবলে পৃথিবী নামের গ্রহটি। চারদিকে ঘোর অমানিশা। সবার মুখে একটাই শব্দ ‘করোনা ভাইরাস’। যা দেখা যায় না চোখে । কিন্তু ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশে। সংক্রমিত হবার আতংকে ঘর বন্দি মানুষ। সামাজিক দূরত্ব বা সঙ্গ নিরোধই এখন সামাজিক সংহিত প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যম। কোভিড ১৯ বিশ্বের সকল অস্ত্রের হুকার আর সন্ত্রাসকে দাবিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর ক্ষমতাবান দেশরা আজ পরাস্ত কোভিড ১৯ এর কাছে। এ ভাইরাস নিয়ে আতংক ভয়-শঙ্কার শেষ নেই মানুষের। কারণ কোভিড ১৯ এর কোন প্রতিষেধক বা ওষুধ এখন নেই কারো কাছে। গভীরভাবে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, সন্ত্রাসের হুমকি নিয়ে মানুষের মাঝে ভয় কাজ করে। সন্ত্রাস দমনের জন্য আঘাতের পালটা প্রতিঘাত হয়। অস্ত্র, বোমা দিয়ে মানুষ মারার দায়ে আইন শাস্তি দেয়। কিন্তু কোভিট ১৯ এমন এক অদৃশ্য ভাইরাস যার থেকে বাঁচতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া যাচ্ছে না। বরং নিজের ঘরে থাকলে নিজে বাঁচবে, দেশ বাঁচবে, বিশ্ব বাঁঁচবে। তাই কোভিড ১৯ অস্থির বিশ্বে যেন এক অদৃশ্য সন্ত্রাস । যার বিরুদ্ধে মানুষ লড়ছে অস্ত্রহীন হয়ে।। মৃত্যুর জন্য দায়ী এ ভাইরাসের জন্য কোন আইন নেই। এ থেকে বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হলো মাস্ক আর গ্লাভস। যা ব্যবহার করেও প্রতিটি মানুষ ভাবছে ‘ আমি কি বাঁচব এ অদৃশ্য ভাইরাস হতে?’

কোভিড ১৯ বিশ্বকে এমন এক অবস্থানে দাঁড় করে দিয়েছে, যেখানে সব মানুষ আজ কেবল বেঁচে থাকার জন্য আকুল আবেদন করছে । এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে সবাইকে প্রতিনিয়ত । প্রতিদিন মৃত্যু খবর আসে সারা দুনিয়া থেকে। থমকে যাওয়া বিশ্বে কর্মহীন মানুষের হাহাকার বাড়ছে কেবল। দূর্ভাগা দুনিয়া নিজেদের ক্ষমতার জন্য পারমাণবিক বোমা আর মানব সৃষ্ট সন্ত্রাসে অস্ত্রের জন্য অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক কারনে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধে জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণার প্রয়োজন বোধ করেনি। কারণ মানুষ বিশ্ব জয়ের দম্ভে ছিল দম্ভিত। তাই আজ অদৃশ্য এ সন্ত্রাস কেবল প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে। যার প্রতিফলনের আরেকটি রূপ হল মানুষের অসহায়ত্ব। মানুষের হিংসাত্মক মনোভাবের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের শিকার কে কখন হবে তা বলা না গেলেও, অনুমেয় হয়। তাই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার অনিশ্চয়তা মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে। একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তার পরিবার সহ আশেপাশের মানুষের রাত দিন কাটে অনিরাপদ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় কোভিড ১৯ নতুন ঘরানার সন্ত্রাস। যা স্থবির বিশ্বের অর্থনীতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরি করতে শুরু করেছে। এলোমেলো হয়ে গেছে দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা ও যোগানের সমীকরণ।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের আলোকে বলা যায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতিটি দেশের মানুষ আতংকগ্রস্থ।বর্তমান আর ভবিষ্যৎতের সংকট মোকাবিলার পরিস্থিতি যুদ্ধকালীন সময়ের মত। যা সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে,” ইউরোপে এরই মধ্যে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ আবহ সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অন্যান্য অঞ্চলেও একই অবস্থা। মানুষ প্রচ- আতঙ্কগ্রস্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে এই প্রথমবারের মতো মানুষ সন্ত্রাস ছাড়া অন্য কোনো কারণে কুঁকরে গেছে। চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসকে মানুষ ঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আর এর ফলে সবার মধ্যে একটি আশঙ্কা ঢুকে গেছে যে ‘এরপর আমিও আক্রান্ত হতে পারি’।

আবার কোভিড ১৯ যে কতটা ভয়াবহ অদৃশ্য সন্ত্রাস তার প্রমাণ মিলে অসলোর নরওয়েজিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ এসটাবলিশমেন্টের সন্ত্রাসবাদবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক থমাস হেগহ্যামার বক্তব্যে। তার মতে, ” মানবসৃষ্ট হুমকিতে সাধারণ মানুষ বেশি ভয় পায়, যদিও এই হুমকি ক্ষতি করে তুলনামূলক কম। অন্যদিকে প্রকৃতিসৃষ্ট বিপর্যয় ক্ষতি করে বেশি এবং এর বিস্তারও ব্যাপক। ঠিক তেমনি করোনাভাইরাস সমাজে সন্ত্রাসবাদের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে এবং ব্যক্তিপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে ব্যাপকভাবে।”

কোভিড ১৯ সারা বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আর প্রমান করেছে,অস্ত্রের মজুদ করার সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। জলবায়ুর পরিবর্তন শুধু কাগজে কলমের কথা নয়। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে হলে চিকিৎসা খাতে গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে এভাবেই মানুষ পরাজিত হবে প্রকৃতির কাছে। সুতরাং বিশ্বকে বাঁচাতে হলে অদৃশ্য সন্ত্রাস কোভিড ১৯ কে মোকাবিলা করতে হবে মানুষকেই। এ ভাইরাস প্রতিরোধ করার মহাঅস্ত্র প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে। কিন্তু আপদকালীন সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা সহমর্মিতা দিয়ে পাশে থাকবে হবে একে অপরের। আর ভুলে গেলে চলবে না অদৃশ্য সন্ত্রাস কোভিট১৯কে প্রতিরোধ করতে সংগনিরোধ বা নিজের ঘরে থাকাটাই এখন একমাত্র পন্থা। আর কোন বিকল্প পথ নেই বিশ্ববাসীর কাছে।

 (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক খুলনাঞ্চল-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)