গত ১৪ দিনে অন্তত ১১৬ জনের মৃত্যু
বিশেষ প্রতিনিধি
করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে শুক্রবার পর্যন্ত ১৪ দিনে অন্তত ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু আগে তাদের কারোরই করোনা টেস্ট করা হয়নি। মৃত্যুর পর যাদের করোনা টেস্টের জন্য নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই রিপোর্ট এখনো আসেনি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বলছে, ‘এসব স্বাভাবিক মৃত্যু ‘ রবিবারও করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজধানীতে একজন মারা গেছেন, তিনি একজন দন্তচিকিৎসক। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিরুপম দাস বলেন, ‘তার করোনার উপসর্গ ছিলো। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। আজ সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার জন্য মৃতের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষায় পজিটিভ ফল এলে তিনিই হবেন দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম চিকিৎসক।’ গত বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুরে শামসুল হক (৫০) নামে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। শামসুল হক কাকড়াজান ইউনিয়নের বড় হামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তার নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ছালেহ আহাম্মদ (৫৫) নামে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালিয়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তারও নমুনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার ভোরে আশ্রাফ উদ্দিন নামে এক যুবক মারা যান। তিনি লক্ষীপুর সদর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাড়িতে মারা যান। তার নমুনা নেয়া হয়েছে।
প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর এমন মৃত্যুর খবর আসছে। গণমাধ্যমে ১৪ দিনে অন্তত ১১৬ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সেসব খবরের ভিত্তিতে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এসব উপসর্গে ভোগা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর বেশি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। দেশে প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ মারা যান। এখন তো হাসপাতালে রোগী কম। তাহলে তারা যাচ্ছেন কোথায়? অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন। আমি বলব, কারো যদি করোনা হয় এবং তিনি যদি বাড়িতে থেকে সুস্থ থাকেন তাহলে তো ভালো। বুঝতে হবে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।’ তবে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, ‘এটা অস্বাভাবিক। আমি ৩০ বছর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত। কখনোই আমি দেখিনি, এভাবে এত মানুষ মারা যেতে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বলছে, টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট। সেখানে আমাদের দেশে নো টেস্ট, নো করোনা। এরপর মিনিমাম টেস্ট, মিনিমাম করোনা। এখন কিছু টেস্ট হচ্ছে রোগীও ধরা পড়ছে। তারপরও বলব, যেটা হচ্ছে পানিতে বরফ খ- ভাসার মতো। বরফ খ- যখন ভাসে তার ১১ ভাগ পানির নিচে থাকে আর এক ভাগ উপরে থাকে। এখানেও করোনা রোগী সেভাবেই দেখা হচ্ছে। আসলে সঠিক সংখ্যাটা আমরা পাচ্ছি না।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩০ জন, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮২০ জন, ২০১৮ সালে এক হাজার ১০ জন এবং ২০১৭ সালে ছিল ১৪১ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই রোগে আক্রান্ত হন ২৬ হাজার ৪৬১ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ২৪ হাজার ৯৫০ জন। গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল সাত হাজার ৫২০ জন ও ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ৪৬০৷ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ছিল ছয় হাজার ৭১২ জন ও ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ১১৫ জন।