আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতাই দিতে পারে করোনা থেকে মুক্তি

4
Spread the love

  • মুমতাহেনাহ্ রাজুল মৌরী

বর্তমান সময়ে করোনা (কোভিড-১৯) নিয়ে পুরো বিশ্ব কেঁপে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগকে প্যান্ডেমিক অর্থাৎ মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মাঝে মাঝে এরকম মহামারী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয় আর তা সামলাতে পুরো পৃথিবীকে হিমশিম খেতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছেনা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশ করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে পারেনি। তাহলে আসুন জেনে নেই, করোনা কী, এর উৎপত্তিস্থল, বাংলাদেশে এর অবস্থা, এর প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কীঃ

করোনা (Corona) (Covid-19) একটি ভাইরাস। মূলত করোনা একটি ভাইরাস গ্রুপ যার পূর্ববর্তী সদস্য সংখ্যা ছিল ৬। যেমন- সার্স, মার্স। সাত নম্বর সদস্য হিসেবে নতুন যুক্ত হয়েছে Novel Corona hv Covid-19 এর জন্য দায়ী। এখানে ঘড়াবষ অর্থ নতুন আর Novel এসেছে ল্যাটিন শব্দ হতে যার অর্থ ক্রাউন (Corona) বা মুকুট।

কেন এই ভাইরাসগ্রুপকে করোনা বলা হয়?

কারণ ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে এ ভাইরাসকে দেখতে মুকুটের মতো লাগে যার ক্ষেত্রে এর দেহ (ভিরিয়নের) চারপাশে প্রোটিন স্পাইক থাকে। এখন আসি Covid-19 প্রসঙ্গে,

Covid-19 (কোভিড-১৯) কে ভাঙ্গলে পাওয়া যায়।

Co- Corona

Vi-Virus

D-Disease

19-2019

অর্থাৎ এটা এমন একটি মারাতœক সংক্রামক ব্যাধি যা নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস, নভেল করোনা। ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে যা প্রধানত মানুষের ফুসফুস তথা শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে।

এই মহামারীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরের দিকে চীনের উহান প্রদেশের হুবেই শহরে প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে। ডিসেম্বরের দিকে শহরটির অনেকেই চোখের প্রদাহ, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসছিলেন এবং অনেকেই আকস্মিকভাবে মারা যাচ্ছিলো এবং ৩১ডিসেম্বর, ২০১৯ইং এ প্রথম চীন তীব্র নিউমোনিয়া জনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি এবং মৃতের হার বাড়ার বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কে জানান। এরপর চীনের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এই নিয়ে গবেষণা করতে থাকে এবং ৭জানুয়ারি, ২০২০ এ নিউমোনিয়া জনিত রোগের জন্য একটি ভাইরাস দায়ী তা আবিস্কার করেন এবং এ ভাইরাসের নাম দেন নভেল করোনা ভাইরাস। তারা আরো ধারনা করেন, বাদুর বা সাপ হতে এ ভাইরাস মানবশরীরে এসেছে। অনেকে ধারণা করেন, অবৈধভাবে পাচারকৃত প্যাঙ্গলিন হতেও এটা আসতে পারে। আবার অনেকে বলেন উহানের কোনো বাজার হতে এটা প্রথম ছড়িয়েছে। আসলে এর উৎপত্তিস্থল নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ আছে। এরপর আকস্মিক ভাবে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১মার্চ, ২০২০ এ করোনাকে আন্তর্জাতিক সংকট প্যান্ডেমিক বা মহামারী হিসেবে ঘোষণা দেয়। করোনার ভয়াল থাবা দেখেছে এবং দেখছে ইতালি, স্পেন ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলো।

বর্তমানে বাংলাদেশেও এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে। চলতি বছরের ৭মার্চ এদেশে প্রথম করোনা রোগি সনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে করোনা রোগি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২১৮জন, মৃতঃ ২০জন, সুস্থ্য রোগি ৩৩জন। করোনা বাংলাদেশে কমিউনিটি স্প্রেড’র পর্যায়ে পৌঁছেছে অর্থাৎ এ অবস্থায় আক্রান্ত বা সংক্রমিত ব্যক্তি সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাবেনা। তাই দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনার পরিবারের ও আশেপাশের লোকের সচেতনতাই পারে আপনাকে ও দেশকে বাঁচাতে।

আমাদের যা করণীয় বিষয়ে কিছু কথাঃ

১। বয়স্কদের কোন অবস্থায় বাইরে বের হতে দেবেননা।

২। যারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তারা অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না।

৩। কিছুক্ষণ পরপর হাত সাবান পানি দিয়ে ২০সেকেন্ড ধরে হাত ধুবেন।

৪। নাকে-মুখে হাত দেয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

৫। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন।

৬। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা রুমাল বা কনুইয়ের ভাজে দিবেন এবং পরে হাত ধুয়ে ফেলবেন।

৭। পরিধেয় বস্ত্র ও বাসস্থান জীবানুমুক্ত করা। ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৮। ফলমূল বা শাকসবজি ভালো করে ধোয়া।

৯। মাছ, মাংস উচ্চ তাপে রান্না করে খাওয়া।

১০। প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলমূল খাওয়া এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

১১। অ্যালকোহল, সিগারেটের অভ্যাস ত্যাগ করা।

১২। করোনার কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলে হটলাইনে যোগাযোগ করা।

করোনার লক্ষণ উপসর্গ হলো:

* জ্বর,

* গল্যাব্যথা,

* শুকনো কাশি,

* শ্বাসকষ্ট,

* মাথাব্যথা,

* ডায়রিয়া ইত্যাদি।

উপরোক্ত লক্ষণ নিয়ে হটলাইনে ফোন করলে আইইডিসিআর তাকে কোয়ারেন্টাইন এবং মাত্রা বৃদ্ধি পেলে আইসোলেশনে রেখে নমুনা সংগ্রহ করে যথেষ্ট চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছে।

তাই আমাদের সচেতনতাই পারে করোনা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে। আসুন আমরা সচেতন হই, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হই। আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই পারে আমাদের ও দেশকে বাঁচাতে।

( লেখক: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-এর চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী।)