পানির‌ উপরে কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ

10
Spread the love

 ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জলাভূমি। কৃষকেরা এসব জলাভূমিতে ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজির চারা ও শাক-সবজি চাষ করেছেন। এসব খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই। কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্থানীয় কৃষকদের চাওয়া আরো একটু সরকারি আনুকূল্য, একটু সহজ শর্তে ঋণ। তাহলে বিস্তার ঘটবে ব্যতিক্রমী এ চাষাবাদে।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাসমান বেডে সবজিচাষ জনপ্রিয়করণ প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় কৃষক পর্যায়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর ভাসমান শয্যা পাতা হচ্ছে। যেসব অঞ্চল পানির নিচে থাকে, সেখানে কৃষকদের ভাসমান সবজি চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মূলত কচুরিপানা দিয়ে শয্যা (বেড) তৈরি করা হয়। প্রতিটি শয্যা ২০ মিটার লম্বা, প্রায় দেড় মিটার পুরু ও প্রস্থ চার মিটার। দুইটি বেড মিলে একটি প্রকল্প। ডুমুরিয়ায় এমন মোট ২০টি প্রকল্পে শাকসবজির আবাদ করা হচ্ছে। কৃষকেরা প্রধানত লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, কলমি লতা, ঢেঁড়স, লতিরাজ কচু ও লাউয়ের চাষ করছেন। প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। কৃষি কর্মকর্তারা চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিচ্ছেন চাষিদের।

উপজেলার মধু গ্রামে ঘুরে দেখা যায় , ৩ থেকে ৪ জন কৃষক একটি ধাপের চারায় পানি দিচ্ছেন। কয়েকজন চারা তুলে নৌকায় সাজিয়ে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কৃষক মহসিন সরদার বলেন, অভাবের কারণে আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আমার ভাগ্য ফিরেছে দিয়াছে। আমার সন্তানরা এখন স্কুল-কলেজে পড়া‌শুনা করছে। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করে আমি বেশ লাভবান হয়েছি। সবজি বিক্রি করে ভালো অর্থ উপার্জন করতেছি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্রমতে, প্রায় তিন বিঘা জমিতে ধাপ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চারা ও সবজি উৎপাদন করা হয়। এর জন্য জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তূপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, কুটিপানা ও দুলালীলতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরু ধাপ তৈরি করা হয়। ধাপে জৈব উপকরণ দ্রুত পচাতে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেকটি ভাসমান ধাপ ১০০ থেকে ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও চার ফুট প্রশস্ত হয়। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে সাত থেকে ১০দিন প্রক্রিয়াধীন রাখতে হয়।

এভাবে পানির ওপর কচুরিপানার বেডে শাকসবজির চাষ করা সম্ভব আগে কখনো চিন্তাই করেননি কৃষকরা। উপজেলার রংপুর গ্রামের কৃষক রনজিৎ বালা বলেন, নিচু জমি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকত। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহায়তা নিয়ে চিন্তাভাবনার পর ধাপ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেন। এখন জলাবদ্ধতার অভিশাপ পরিণত হলো আশীর্বাদে!

উপজেলার মধু গ্রামের কাসেম গাজী বলেন, এরই মধ্যে প্রায় ১২ হাজার টাকার লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, ঢেঁড়স ও লাউ বিক্রি করেছি। নতুন আরো সবজি হচ্ছে।

ওই গ্রামের কৃষক রাবেয়া বেগম বলেন, ভাসমান সবজি চাষের প্রতি আমাদের কোনো ধারণা ছিল না, কিন্তু এ বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো। আমার চারটি বেড তৈরি করতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি এরই মধ্যে ১১ থেকে ১৩ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। এখনো অনেক সবজি বেডে রয়েছে।

শাহাপুর ইউনিয়নের থুকড়া গ্রামের কৃষক প্রকাশ মণ্ডল বলেন, প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় সরকারি খরচে ভাসমান সবজি চাষ করার ধারণা হয়েছে। এ ধরনের চাষ লাভজনক। তাই ২টি বেডে সবজি চাষ করেছি। খুব ভালো সবজি হয়েছে। যেসব মজা পুকুর, ডোবা ও খাল এমনিতেই পড়ে থাকে, সেসব জায়গায় ভাসমান সবজির চাষ করা যাবে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন  বলেন, এই পদ্ধতিতে বিষ ও কীটনাশক প্রয়োগ না করে শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে,কৃষকদের। কমপক্ষে ২ থেকে ৩টি বেড থাকলে প্রত্যেক কৃষককে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় এবারই প্রথম এ ধরনের প্রদর্শনী প্রকল্প চলছে। ইতোমধ্যে কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে।