কপিলমুনির রোগগ্রস্থ এক মায়ের চিকিৎসার জন্য বিত্তশালী পিতার দ্বারস্থ অসহায় পুত্র রাবির; হৃদয় টলেনি পাষন্ডের!

0
Spread the love


পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি ঃ


দুরারোগ্য মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত মা রহিমা বেগম বিছানা শয্যায়। বিত্ত বৈভবের মালিক পিতা ওয়ারেশ আলীর এক এরিয়াতেই রয়েছে প্রায় শত বিঘা জমি, মৎস্য লেক, বিপুল বৃক্ষরাজি সহ একাধিক ইটের ভাটা। অথচ রোগগ্রস্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য আকুতি জানিয়ে কানাকড়িও মেলেনি পিতা ওয়ারেশ আলীর কাছে। নাবালক পুত্র রাবিরের হোটেল বয়ের (কর্মচারীর) সামান্য বেতনের টাকায় চলছে তার প্রিয়মুখ, জনম দুখিনী মায়ের চিকিৎসা। হোটেল থেকে বাড়ি ফিরেই মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মা মা বলে ডাক দেয় রাবির। বলে মা তোমার কিচ্ছু হবেনা। আমি তো আছি, দেখো টাকা এনেছি জুস কিনেছি তুমি খাবে। আল্লাহর রহমতে তুমি ভাল হয়ে যাবে। রাবিরের এমন আশা ও ভাবনার কোন প্রতিফলন নেই, তবুও চেষ্টা ও মনোবল তাকে দমাতে পারেনি।

একদিকে অসুস্থ্য মায়ের করুণ অবস্থা অন্যদিকে নাবালক পুত্র রাবিরের বিষন্ন মুখে শতকোটি চেষ্টা যেন উপস্থিত মানুষদের কাঁদিয়ে ফিরছে। কেবল কাঁদেননি পাষন্ড পিতা ওয়ারেশ আলী। কখনো খোঁজও নেয়নি অসুস্থ স্ত্রী রহিমা ও নাবালক পুত্র রাবিরের।
জানাগেছে, এক বুকভরা আশায় অসুস্থ্য মাকে সাথে নিয়ে পিত্রালয় সাতক্ষীরা জেলার মাধবকাটিতে গিয়েছিল রাবির। পিতার মন জয় করতে সাথে মিষ্টিও নিয়েছিল সে। কিন্তু সেখানে ঠাই মেলেনি তাদের। মেলেনি কোন আশ্রয়। মিষ্টিসহ ফিরে যেতে হয় মা ছেলেকে জানাগেছে, বিয়ের পর স্ত্রী রহিমাকে কখনও নিজ বাড়িতে নেয়নি স্বামী ওয়ারেশ আলী। বিয়ের পর শশুরালয় পাইকগাছার শ্রীরামপুর গ্রামে বাপের বাড়ি রেখে আসা যাওয়া করতে থাকে ওয়ারেশ। এরপর পুত্র রাবিরের জন্ম হয়। মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া থাকলেও শিশুপুত্র রাবিরের জন্ম যেন স্ত্রী রহিমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে স্ত্রী রহিমাসহ পুত্র রাবিরকে রেখে চলে যায় ওয়ারেশ আলী। পরবর্তী কোন এক সময় ওয়ারেশ স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় স্ত্রী রহিমাকে। শুরু করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। অবশেষে ৩ বছরের রাবিরকে নিয়ে অপহরন মামলায় জেলে যেতে হয় রহিমাকে। শুধু এখানেই শেষ নয়, জেল থেকে মুক্ত করার নামে স্ত্রী রহিমার কাছ থেকে তালাক নামায় স্বাক্ষর নিয়ে নেয় স্বামী ওয়ারেশ।
জানাগেছে, এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের একজন ওয়ারেশ আলী সম্প্রতি হজ্ব পালন করেছেন। হাজিদের কাতারে নিজেকে সপে দিয়েছেন। তাইতো পাষন্ড মনের পরিবর্তন হতে পারে ভেবেই নাবালক পুত্র রাবিরের সর্বশেষ বায়না মেটাতে ছেলে রাবিরকে নিয়ে স্বামীর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার মাধবকাটি গ্রামে যান অসুস্থ স্ত্রী রাবির মাতা রহিমা বেগম। কিন্তু হৃদয় টলেনি পাষন্ড পিতার। পিতার মন গলাতে মিষ্টি কিনতেও ভুল করেনি নাবালক রাবির। কিন্তু সব কিছুই যেন বৃথায় রূপ নেয়। ফিরে আসতে হয় অসুস্থ্য মাকে সাথে নিয়ে। নাবালক রাবির অসুস্থ্য মা রহিমাকে নিয়ে তার নানা বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিস্থ নগর শ্রীরামপুর গ্রামে বর্তমানে বসবাস করছে। অসুস্থ মাকে রেখে প্রতিদিন হোটেল বয়ের কাজ করে তাই নুন্যতম রোজগারের টাকায় জীবিকা ও মায়ের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে সে। এমন করুণ পরিনতি দেখে এলাকার মানুষ যত সামান্য সহযোগিতার হাত বাড়ালেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি নগন্য। ঘটনা জানতে পেরে এ প্রতিনিধি অসহায় রাবিরের মুখোমুখি হন। প্রতিনিধিকে দেখেই হতচকিত হয়ে পড়ে সে। ফেলফেলিয়ে তাকিয়ে আবারও মায়ের গায়ে হাত বুলাতে থাকে রাবির। তখনও নাবালক রাবিরের চোখেমুখে বিষন্নতা আর অজানা দুশ্চিন্তার ছাপ। মা যেন সুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারে এমন আশায় রীতিমতো ব্যাস্ত। মাকে নিয়ে তার স্বপ্নও অনেক আশার কথা জানায় নাবালক পুত্র রাবির। পিতৃ বৈভবের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার। মাকে সুস্থ্য করাটা তার কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু হোটেল বয়ের টাকায় কি মায়ের চিকিৎসা সম্ভব! এ বিষয়ে সমাজের বিত্তবান ও স্বহৃদয়বানদের কাছে নাবালক রাবির সাহায্যের দাবি জানিয়েছে। সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা, মোঃ রেজাউল করিম, আর কে ফার্মেসী, জনতা ব্যাংক মোড়, মেইন রোড, কপিলমুনি বাজার, পাইকগাছা, খুলনা। বিকাশ নাং ০১৯৩৭১৬৫০৩২