স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য শীঘ্রই ঢাকায় ১০ টাকা কেজির চাল

3
Spread the love

ঢাকা অফিস

করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে ঢাকার স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের স্বস্তি দিতে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রির কর্মসূচী গ্রহণ করা হচ্ছে। খোলা বাজারে চাল বিক্রি বা ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে শীঘ্রই এই কর্মসূচী চালু করবে সরকার। বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে খাদ্য ভর্তুকি খাতে চলতি বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। গ্রাম পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ভর্তুকি মূল্যে মাত্র ১০ টাকা কেজিতে পাঁচ মাস চাল বিক্রি করা হয়। কিন্তু ঢাকায় ওএমসের ৩০ টাকা কেজির চালে তেমন সাড়া নেই। তবে করোনায় আয় উপার্জন কমে যাওয়ায় গরিব মানুষদের কাছে ১০ টাকা কেজিতেই চাল বিক্রি করা হবে।

জানা গেছে, করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় সরকার বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করতে যাচ্ছে। রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে যারা ‘দিন আনে দিন খান’ এই মুহূর্তে তাদের আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নগরবাসী এখন আর বাসার বাইরে বের হচ্ছে না। অন্যদিকে ২৬ মার্চের পর ১০ দিনের সরকারী ছুটি হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায়, রাজধানীর রিক্সা চালক, সিএনজি চালক, ঠেলা চালক, অটোচালক, ফুটপাতের হকার, রাস্তার পাশের ফল কিংবা মুরগি ও মাছ বিক্রেতা এরকম হাজারও রকমের ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও দিনমজুরের অর্থসঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে করোনার আতঙ্ক ও মৃত্যু ঝুঁকি। এরই মধ্যে বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে কেজিতে ৮-১২ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া নগরবাসীর অনেকে অতি উৎসাহিত হয়ে চালের মজুদ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে ঢাকা স্বল্প আয়ের মানুষ। ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পরও বাজারে স্বস্তি ফিরে আসছে না। বরং বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম।

জানা গেছে, ঢাকায় ১০ টাকা কেজিতে খোলা বাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। ব্যবসায়ীরাও চালের দাম কমাতে বাধ্য হবেন। এতে করে ঢাকার সাধারণ মানুষের অস্থিরতা কমে আসবে। ইতোমধ্যে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বেশ কয়েকটি পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে করে এসব জিনিসের দাম বাড়তে পারেনি। রাজধানী ঢাকায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণলয়ের মাধ্যমে ওএমএস কার্যক্রম চালু আছে। কিন্তু এই কার্যক্রমে প্রতিকেজি চাল বিক্রি করা হয় ৩০ টাকায়। করোনা প্রভাবের আগে বাজারে মোটা চাল ২৮-৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এ কারণে ওএমএসের চালে সাধারণ ভোক্তাদের কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এখন চালের দাম বেশি। প্রতিকেজি মোটা চাল এখন ৪০-৪৫, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫০-৫৫ এবং সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, খাদ্য ভর্তুকি খাতে চলতি বাজেটে ৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ কমানোর চিন্তা করছিল সরকার। এছাড়া খাদ্যমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও ওএমএসের চালের দাম কমানোর প্রস্তাব দিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এতে প্রতিকেজি চালের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ডিলার মূল্য ২৩ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে করোনার প্রভাব মোকাবেলা এবং স্বল্প আয়ের গরিব মানুষদের সস্তায় চাল খাওয়াতে হলে এই দামও অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ঢাকায় চাল ১০ টাকায় বিক্রি করার পরামর্শ দিয়ে করুণীয় নির্ধারণে অর্থমন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি খাতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রয়েছে। এতে করে সরকার ভর্তুকি দিয়ে চাল বিক্রি করতে পারছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় গ্রাম পর্যায়ে ১০ টাকায় পাঁচ মাস চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এই চালে সাধারণ ভোক্তাদের আগ্রহ অনেক। কিন্তু ঢাকায় ওএমএসে ৩০ টাকায় কিনতে হয় সেই চাল। তিনি বলেন, সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি না কমে বরং বাড়াতে পারে সরকার। কারণ করোনা আতঙ্কে ইতোমধ্যে ভোক্তারা বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ চাল কিনে নিয়েছেন। কিন্তু গরিব মানুষের কাছে কোন মজুদ নেই। তাদের ১০ টাকায় চাল দিতে উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শ দিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে।

জানা গেছে, সরকারের কাছে মোট ১৭ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন গুদামজাতকৃত খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে সরকারের হাতে মজুদ রয়েছে ১৪ লাখ ২৯ হাজার টন চাল। এ ছাড়া গম রয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। যেকোন আপৎকাল মোকাবেলায় এ পরিমাণ চাল ও গম যথেষ্ট। সামনেই বোরো মৌসুম। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়াই। এছাড়া সরকারী ছাড়া বেসরকারী খাত ও মিল মালিকদের কাছেও বিপুল পরিমাণ চালের মজুদ রয়েছে। রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিল মালিকদের হাতেই অন্তত এক কোটি টন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি থাকায় বাড়তি চাল রফতানির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক ব্যবসায় মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতে চাল রফতানির অনুমতি দিয়ে চিঠি দিয়েছে। বেশকিছু উদ্যোক্তার আবেদনে সাড়া দিয়েছে সরকার। কিন্তু করোনার প্রভাবে পুরো ইউরোপ এখন ল- ভ-। এই অবস্থায় চাল রফতানি করা সম্ভব নয়। কিন্তু দেশে করোনা সঙ্কটকে পুঁজি করে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।