করোনা ভাইরাসে সুন্দরবন ট্যুরস ব্যবসায়ে ধস : ক্ষতি ৪ কোটি টাকা

1
Spread the love


রশীদ হারুন:


বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র উপভোগ করতে বছর জুড়েই পর্যটকদের আসা-যাওয়া থাকে। শীতের মৌসুমে দেশের সর্ব দণি-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। অক্টোবর থেকে শুরু হয় এই মৌসুম আর শেষ হয় ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এই ৬ মাস চলে ট্যুরস ব্যবসা। করোনা ভাইরাসের কারণে এই ব্যবসায়ে ধ্বস নেমেছে। এতে ক্ষতি প্রায় ৪ কোটি টাকা। গত ১৯ মার্চ বন বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণ না করার জন্য। এই চিঠির আলোকে খুলনার ট্যুরস ব্যবসায়ীরা বুকিং বাতিল করেছেন।
খুলনায় রয়েছে ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন টিওএএস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর আওতায় রয়েছে ৬৫ জন সদস্য। এছাড়াও কয়েকজন অপারেটর রয়েছে। প্রত্যেকের নিজস্ব জাহাজ রয়েছে। এর পাশাপাশি ৪টি জাহাজ রয়েছে ভাড়া। সব ক’টি জাহাজ ৪ ও ৫নং ঘাটে ভৈরব নদে নোঙ্গর করা রয়েছে। প্রত্যোক জাহাজে রয়েছে শ্রমিক ও কর্মচারী। এদের বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল । তাদের বেতন ভাতা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক কর্মচারী ছাটাই করা হচ্ছে। আগাম বুকিং নেয়া টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
ট্যুরস ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত নভেম্বর মাসে ঘুর্ণিঝড় বুলবুলে তাদের ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। ফলে তারা চরম বিপর্যের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র জানান, পর্যটকদের চাপ সামলাতে সুন্দরবনে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ট্যুরিজম সেন্টার।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর চেয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ একটু আলাদা। তাই সুন্দরবন ভ্রমণের আগে জেনে নিন, কখন যাবেন, কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন বা কাদের সাথে যাবেন। ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের কথা ভেবে সুন্দরবন ভ্রমণের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হলো।
সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বন্যশূকর, বানর, কুমির, ডলফিন, কচ্ছপ, উদবিড়াল, মেছোবিড়াল ও বন বিড়ালসহ রয়েছে ৩৭৫ এর অধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণী। সেই সাথে সুন্দরবন জুড়ে জালের মতো জড়িয়ে থাকা ৪৫০ টি ছোট-বড় নদী-খাল ভ্রমণের অপার সুযোগ পাবেন ভ্রমণ পিপাসুরা।
বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবন জুড়েই পর্যটকদের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার অপার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলার টাইগার পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত কটকা, কচিখালীর অভয়ারণ্য কেন্দ্র, করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, কলাগাছিয়ায় ইকোট্যুরিজম সেন্টার, হিরণ পয়েন্ট খ্যাত নীলকমল অভয়ারণ্য, দুবলারচর, মানিকখালী, আন্দারমানিক ও দোবেকী এলাকায় পর্যাটকদের আনাগোনা বেশি থাকে।
ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন সাবেক সভাপতি ও এভার গ্রীণ ট্যুরস’র সত্বাধিকারী জেড এম কচি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের একটা সুনাম রয়েছে, তিনি আগাম নেয়া ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। বন বিভাগ অনির্দিষ্ট কালের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণ নিষেধ করে চিঠি দিয়েছেন। সে আলোকে তারা ট্যুরস ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা লোকশান গুনছেন। প্রতিটি জাহাজের কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে।
নিউ রেইনবো ট্যুরস’র সত্বাধিকারী শেখ আ. কুদ্দুস বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কর্মচারী ছাটাই দিতে হয়েছে। এই মৌসুমে আর ব্যবসা করা হবে না। এর পর আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে না। তিনি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া ফেরৎ দিয়েছেন।
সুন্দরবন ট্যুরস বিডি’র সত্বাধিকারী আতিয়ার রহমান বাবুল বলেন, ঘুর্ণিঝড় বুলবুলে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সে ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আগামী ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এই দিন সরকারি ছুটির কারণে তাদের যাত্রী বেশী হতো। সে ভাবে তাদের বুকিং নেয়া ছিল। ট্যুরিসদের কাছ থেকে নেয়া সাড়ে ৩ লাখ টাকা ফেরৎ দেয়া হয়েছে। জাহাজের কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে।