মিলি রহমান
ধীরে ধীরে গরম পড়তে শুরু করেছে। আর এই গরমে বাড়বে রাস্তার পাশের শরবত এবং পানীয়র চাহিদাও। সে সাথে দেখা দেবে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। এ অবস্থা যখন এমন তখন আস্থা রাখতে পারেন বেলের শরবতের ওপর। প্রচ- গরমে শরীর এবং পেট উভয়ই ঠান্ডা হবে। শুধু বড় নয় ছোটদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি বেল। ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম (খরসড়হরধধপরফরংংরসধ)। বাংলাতে যার নাম বেল। ইংরেজিতে বলা হয় ‘উডঅ্যাপল’। বিশ্বের কোথাও কোথাও এই ফলটিকে ‘এলিফ্যান্টঅ্যাপল’ও বলা হয়। তার একটি কারণ হল সুস্বাদু এই ফলটি হাতিদের প্রিয় খাবারের মধ্য একটি। তবে ফলটিকে আপনি যে নামেই ডাকুন না কেন পুষ্টি বিচারে এর তেমন কোনও হেরফের ঘটার সম্ভাবনা নেই।
বেল খাওয়ার যত ভাল দিক : (১). বেল এমন একটি ফল যা আমাদের দেহের নানাবিধ রোগ সারাতে খুবই কার্যকর। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা, পাইলস, পেপ্টিক আলসার এবং ডায়রিয়া। (২). বেলে উচ্চ পরিমাণে ‘ফেরোনিয়া গাম’ নামক প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। (৩). শরীর থেকে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে এই ফলটির জুড়ি নেই। যাদের প্রায় চুলকানি বা পাঁচড়া হয় তারা প্রতিদিন মাত্র ৫০ মিলিগ্রাম বেলের শাস গরম পানি এবং সামান্য চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যাবে। এতে করে লিভার এবং কিডনি উভয়ই সুস্থ থাকবে। (৪). যারা কিডনির সমস্যাতে ভুগছেন তারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এই ফলটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।বেলে ডিটক্সিফাইং প্রোপার্টিস থাকার কারণে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা এবং কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। (৫). শুধু বেল নয়, বেলের পাতাও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। যাদের দীর্ঘদিনের সর্দি-কাশি রয়েছে অথবা যারা প্রায়ই শ্বাস-কষ্ট বা সর্দি-কাশিতে ভোগেন তারা ১-২টি বেলের পাতা পানিতে ৪-৫ মিনিট ফুটিয়ে খেলে উপকার পাবেন। বেলের পাতা গলা ব্যথা ও কফ জমে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে। (৬). যারা প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাতে ভোগেন তারা নিয়মিত পাকা বেলের শরবত খেতে পারেন।বেলে থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য লাক্সাটিভ প্রোপার্টিস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর। (৭). যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারা বেলের পাতা পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে সেই পানি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। (৮). ফুরাইড ইন্ডিউসড হাইপারগ্লাইসেমিয়া দূর করতে ও বেল ভীষণ কার্যকর। কারণ বেলে রয়েছে স্যাপোনিন, ফাইটোস্টেরল, ফাভোনয়েড, পলিফেনলস এবং এসকরবিক অ্যাসিডের মত উপাদান যেগুলো রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বলে প্রমাণিত। (৯). যারা প্রায়ই দুর্বলতা বা এনার্জির ঘাটতিতে ভুগছেন তারা ১০০ গ্রাম বেলের শাস সামান্য খেজুরের বা আখের গুড়ের সাথে মিলিয়ে শরবত বা এমনিতেই খেতে পারেন। খুব দ্রুত প্রাকৃতিকভাবে এনার্জি ফিরে পাবেন। কারণ বেল এমন একটি ফল যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন-সি রয়েছে।
(১০). নিদ্রাহীনতা দূর করতে বেল গাছের মূলের গুড়া বেশ কার্যকর। যারা ঘুমের সমস্যা নিয়ে বেশ কষ্টে আছেন তারা বেল গাছের মূলের পাউডার সামান্য পানিতে একটু ঘন করে মিক্স করে কপালে প্রলেপ দিতে পারেন। এতে করে ঘুম এবং ঘুমের কোয়ালিটি উভয়ই ভাল হবে। (১১). যারা হুট করে ডায়রিয়া বা আমাশয়ে ভুগছেন তারা কাঁচা বেল পুড়িয়ে খেলে বা কাঁচা বেলের শরবত খেলে দ্রুত উপশম হবে। তবে পেট খারাপ হলে ভুলেও পাকা বেল বা বেলের শরবত খেতে যাবেন না। তাহলে একেবারে হিতে বিপরীত হবে। সুস্থ থাকতে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি বেল ও খাদ্য তালিকায় নিয়মিত সংযোজন করতে পারেন।