শামীম খান, মহেশপুর(ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:
যেখানে গ্রামাঞ্চল থেকে ধানের গোলা হারিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় ঝিনাইদহ মহেশপুরের ভবনগর গ্রামে পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে ধানের গোলা চোখে পড়ছে।
গ্রামের কৃষকরা বলছেন, তারা এখনও অনেকে গোলায় ধান রাখেন, আবার অনেকের গোলা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যেগুলো তারা স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন। তাদের গ্রামে এখনও অর্ধশত বাড়িতে গোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসি।
সরেজমিনে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ধানের গোলা রয়েছে। একই স্থানে পাশাপাশি একাধিক গোলা আছে। গ্রামের আমির হোসেন তরফদার জানান, তাদের গ্রামের সব বাড়িতে গোলায় ধান রাখা হতো। কিন্তু এখন ধানের চাষ কম হওয়ায় অনেক পড়ে আছে। অবশ্য কয়েকজন আছেন যারা এখনও গোলা ব্যবহার করেন, তারা গোলায় ধান রাখেন। ঝন্টু মন্ডল জানান, গ্রামের আবুল কাশেম, আসমত আলী, শুকুর আলী, আব্দুল কাদের, নাসির উদ্দিন, রমজান আলী, আমির হোসেন তরফদার, আকুল খাঁ, রিপন মিয়া, আজগর আলী,সিরাজুল ইসলাম, ফজলুর রহমান মোল্লা, জামান মিয়াসহ কমপে ৫০ টি বাড়িতে ধানের গোলা রয়েছে।
এগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি। ওপরের ছাউনিতে অনেকে খড় ব্যবহার করেন,আবার অনেকে টিন ব্যবহার করেন। ভবনগর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, একটি গোলা তৈরী করতে কৃষকের খরচ হয় ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত। যেগুলোতে ১৫০ থেকে ২৫০ মন ধান রাখা যায়। গোলায় ধান রাখলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে। কৃষক শাহাজ উদ্দিন জানান, ১৯৭৭ সালের পর তাদের গ্রামে ব্যাপকহারে ধান চাষ শুরু হলে গ্রামের মানুষের মধ্যে গোলা বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। সেই থেকে গোলাগুলো ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, ভবনগর গ্রামের বাসিন্দা হারুন-অর রশিদ জানান, কৃষকরা এখনও গোলায় ধান রাখতে আগ্রহী। কিন্তু উৎপাদন খরচ মিটিয়ে ধান সংরণ করা তাদের জন্য কষ্টকর। তারপরও অনেকে গোলায় ধান রাখেন। বস্তার চেয়ে গোলায় ধান রাখলে ধান ভালো থাকে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ আমানুল্লাহ খুলনাঞ্চলকে জানান, গোলায় ধান রাখা কৃষকের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষক ধান উৎপাদন করে লাভবান হলে আবারো মাঠে ধানের চাষ বৃদ্ধি পাবে ,পাড়ায় পাড়ায় গোলা ভরা ধান পাওয়া যাবে।