করোনায় ভয় নয়, ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা সার্কভুক্ত দেশগুলোর: অপরিচিত দুর্যোগ মোকাবিলায় তৈরি থাকতে হবে

7
Spread the love

খুলনাঞ্চল রিপোর্ট::

আতঙ্কিত না হয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সমন্বিত কৌশল নির্ধারণ করে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন সার্কভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা। রোববার বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সে সার্ক নেতারা করোনা ভাইরাসের মতো অপরিচিত দুর্যোগে তৈরি থাকার পাশাপাশি সবাই মিলে তা মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্সে শুরুতে মোদি ১০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি ফান্ড’ গঠনের প্রস্তাব দেন। এই ফান্ড করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যে কোনো দেশ ব্যবহার করতে পারবেন বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায় অনলাইন ট্রেনিংয়েরও প্রস্তাব দিয়ে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমে তিনজন করোনা ভাইরাসে আকান্ত হলেও তাদের মধ্যে দুজন ভালো হয়ে গেছে। নতুন করে দুইজন আক্রান্ত হয় তবে দেশের ভেতর থেকে এখনো কেউ আক্রান্ত হয়নি। এখন আমাদের খারাপ সময় যাচ্ছে।’

‘‘এখন আমাদের একসাথে, কাছাকাছি থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের একে অন্যের সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ি, আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনে টেকনিক্যাল লেভেলেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজ করা যেতে পারে।’’ জনগণকে সচেতন করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা কথা প্রচার করা হচ্ছে।’

তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আশা করি আমাদের আলোচনা এখানেই শেষ হবে না। এটি চলতে থাকবে। কীভাবে এ আলোচনা সামনের দিকে নেওয়া যায় তা আমাদের বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে নেবেন। আমরা একে অন্যের সাথে ইন্টারকানেক্টেড।’

বক্তব্যর শুরুতে চীনের উহানে ২৩ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়  ভারতের সহযোগিতার জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলো নিয়ে কমন ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের প্রস্তবান দেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ ২০০৩ সালের সার্স মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা দরকার। করোনার জন্য মালদ্বীপসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। যা অর্থনীতির ওপরও আঘাত দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কায় ন্যাশনাল টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে যারা প্রতিদিন করোনা ভাইরাস রোগী ও কোয়ারেন্টিনের ওপর নজরদারি করছে। পাবলিক হেলথ ইন্সপেক্টররা কোয়ারেন্টিনে থাকাদের ওপর নজরে রাখছে।’

‘‘এছাড়া আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, খেলাধুলাসহ সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ করা হয়েছে। স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব দেশের সঙ্গে অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’’ নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সব ধরনের পর্বত আরোহীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।’ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেন, ‘শুধু এই ভাইরাস নয় বরং এর কারণে পরে আমাদের অর্থনীতির ওপর যে আঘাত হানবে, সেক্ষেত্রেও আমাদের একই ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে। আমাদের এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিপদেও একে অন্যের সহযোগিতা ও পাশে থাকা প্রয়োজন।’ সার্কভুক্ত সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভিডিও কনফারেন্সে দেশটির স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাফর মির্জা উপস্থিত থেকে সার্ক সেক্রেটারিয়াটে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সার্ক স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের কনফারেন্স আয়োজনের প্রস্তাবকেও স্বাগত জানায় পাকিস্তান।

বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫৮৩৫, আক্রান্ত দেড় লাখ

খুলনাঞ্চল ডেস্ক

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত মহামারি আকার ধারণ করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে রোববার (১৫ মার্চ) সকাল পর্যন্ত নতুন করে ১৫২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৩৫ জনে পৌঁছেছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৫ হাজার ৯২২ জন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, উৎপত্তিস্থল চীন ছাড়াও বিশ্বের মোট ১৫২টি দেশে মরণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া ঝুঁকিতে আছে আরও অনেক দেশ। এতে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে। যাদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানের নাগরিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এমন অবস্থায় বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি মহামারি ভাইরাসটি মোকাবিলায় এরই মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

এ দিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এমনকি ইউরোপকে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির কেন্দ্রস্থল বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি। চীনের চেয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বাড়তে থাকায় ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়াসিস ঘোষণাটি দেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপ এখন মহামারির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। যা আমাদের জন্য একটি করুণ মাইলফলক।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শুধু চীনের মূল ভূখ-েই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮২৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৯৯ জনের। চীনের পর সবচেয়ে বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে একদিনেই ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪১ জনে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ১৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তাই দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। এর পরের অবস্থান ইরানের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৭২৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাছাড়া মারা গেছেন ৬১১ জন।

অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৩৬ জন, আর প্রাণ গেছে ৫৭ জনের। স্পেনে আক্রান্ত ৬ হাজার ৩৯১ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৯৬ জনের। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত এক হাজার ৩৭৫ এবং মারা গেছেন ১৩ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত এক হাজার ১৪০ ও মৃতের সংখ্যা ২১। তাছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক লোক প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মানুষ ও প্রাণীদের ফুসফুসে সংক্রমণ করতে পারে। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। তাছাড়া শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।

বর্তমানে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। তাই মানুষের শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।