তালার এইএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে গাত্রদাহ!

10
Spread the love

ইলিয়াস হোসেন, তালা

তালা উপজেলার এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম.এম.মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীর আনা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের উৎস নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে খবর প্রকাশে দৌড়-ঝাপ শুরু করেছেন আলোচিত মোবারক হোসেন। তবে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ইউএনওকে পাঠানো অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র দাবি করছে, অভিযোগের বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করবেন। সূত্র বলছে, দন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত করার পাশাপাশি স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন ঐ শিক্ষক। এনিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এব্যাপারে তিনি কোন নির্দেশনা পাননি, এমনকি বিষয়টি তিনি জানেনও না।

প্রসঙ্গত, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা শাহাদাৎ হোসেন গোলদার ও মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল গফুর গোলদার প্রধান শিক্ষক এম এম মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ২০০৯ সালের নভেম্বরে তার নিয়োগের পর থেকে বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ও শৃঙ্খলা সম্পূর্ণরুপে ভেঙ্গে পড়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রায় ৮শ’ শিক্ষার্থীর অবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার নিয়োগের পর থেকে অদ্যাবধি ৮ জন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ৩০-৩২ লক্ষ টাকা, স্কুলের ৬ বিঘা জমির হারি বাবদ ৫ লক্ষ টাকা, পুরাতন বই-খাতা বিক্রি থেকে ১ লক্ষ টাকা, অবৈধ গাইড বই চালানো থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা, উপবৃত্তি থেকে ৩ লক্ষ টাকা, ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি খাতে ১ লক্ষাধিক, এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাকটিক্যাল বাবদ ১ লক্ষ টাকা, এডমিট বিতরণ থেকে ১ লক্ষ টাকা, প্রশসংসা পত্র ও সার্টিফিকেট বিতরণ থেকে ১ লক্ষ টাকা, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় খাত থেকে আদায়কৃত ৭০-৮০ হাজার টাকা, কোচিংসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে আদায়কৃত টাকা আত্মসাৎ ও ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি বিনা রশিদে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় থেকে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা শাখার সহকারী কমিশনার উম্মে মুসলিমা স্বাক্ষরিত এক পত্রে (স্মারক নং: ০৫.৪৪.৮৭০০.০২৩.০১.০০২.১৯.১৬৯ ২৮৬ (যুক্ত) বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে ইউএনওকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এমএম মোবারক হোসেন তালা উপজেলার হরিহর নগর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হক মোড়লের ছেলে। ১৯৮৬ সালে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির থেকে এসএসসি, ১৯৮৮ সালে কপিলমুনি কলেজ থেকে এইচ,এস,সি, ১৯৯১ সালে খুলনা ব্রজলাল কলেজ থেকে অনার্স ও রাজশাহী বিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে ঐ বছরের নভেম্বরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সেখানে যোগদান করেন তিনি।

স্থানীয় একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী জানায়, পৈত্রিক সূত্রে তিনি মাত্র ১৩ কাঠা জমির মালিক ছিলেন। চাকুরী জীবনে ২ ছেলে-মেয়েকে বাইরে রেখে ভাল কলেজে পড়া-লেখার পাশাপাশি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফাউন্ডেশনসহ একতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বসত ঘরে রাজকীয় আসবাবপত্র সংযোজনসহ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গরুর ফার্ম। সম্প্রতি তিনি সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ৪ টি বিদেশী জাতের গরু খরিদ করেছেন। প্রায় ২/৩ বছর পূর্বে তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি চুরি হয়ে গেলে পরের দিনই ক্রয় করেন, ডিসকভার-১২৫ সিরিজের আরো একটি মোটর বাইক। নিজের মেয়ের বিয়েতে আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মত। জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ পত্রের স্বাক্ষী এইচ.এম.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি মো: ময়নুল ইসলাম, পরিচালনা পরিষদের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম গোলদার, সাবেক সদস্য মো: মোসলেম উদ্দীন গোলদার, মো: হাফিজুল জর্দ্দার ও কামরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা জানান, মোবারক হোসেন শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় খেশরা ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। দীর্ঘ দিন যাবৎ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নিলেও তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এমনকি গত পরিচালনা পরিষদের দু’জন সদস্য বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাওয়ায় তিনি তাদের উপরও চড়াও হন। তবে সর্বশেষ সচেতন এলাকাবাসীর সাথে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সম্পৃক্ত হওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন তারা।

এলাকাবাসী বলছেন, অনতিবিলম্বে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া না হলে তারা সম্মিলিতভাবে আরো কঠোর কর্মসূচী গ্রহন করবেন।