জয় বাংলা

0
Spread the love

প্রায় সোয়া দুই বছর আগে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন বশির আহমেদ নামের একজন আইনজীবী। সেই রিটের নিষ্পত্তি করে উচ্চ আদালত মঙ্গলবার তার রায়ে সরাসরিই বলে দিয়েছেন ‘জয় বাংলা’ হবে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান। সাংবিধানিক সীমাবদ্ধার কারণে এখনই ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেননি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। তাই বিবাদী পক্ষকে আগামী তিন মাসের মধ্যে রায় বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। আদালত তার রায়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাসেম্বলিতে এবং রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে সাংবিধানিক পদাধিকারী ও সরকারি কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্য শেষে যাতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন সে জন্যও পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে হাইকোর্ট তার রায়ে ‘জয় বাংলা’কে ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয় ঐক্যের স্লোগান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেননা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে-বিদেশে একটাই স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। এমনকি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের মুখেও এই স্লোগান দিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

আরও সহজ করে আমরা বলতে পারি, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে এই স্লোগানের শক্তি আর অনুপ্রেরণায়। কিন্তু একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বছরের পর বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকে জাতিকে তার জন্মের মূলমন্ত্রকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। তাদের কূটকৌশলে দেশের কয়েকটি প্রজন্ম ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ভুলতে বসেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের সেই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। ‘জয় বাংলা’ কোনো সাধারণ স্লোগান না। এই স্লোগানের আগে আর কখনো বাঙালি এতটা দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠতা নিয়ে তার মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি। ছোট্ট দুটি বাক্য অথচ কি গভীর তৎপর্যতা বহন করে। এই বাক্যের মধ্যেই বাঙালির রাজনীতি, সংস্কৃতি, জাতীয় পরিচয় আর জাতীয় আবেগ খুঁজে পেয়েছিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ বলে। যে ভাষণই মূলত বাঙালিকে মুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে সেদিন এই বাক্য শুনেই কোটি মানুষ তার হৃদয়ে স্থান দিয়েছিল ‘জয় বাংলা’কে। আর তাই দিয়েই পেয়েছিল স্বপ্নের বাংলাদেশকে। আমরা মনে করি, স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পরে হলেও ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করার রায় জাতিকে নতুন করে ঐক্যের পথ দেখাবে। এই স্লোগান এক কাতারে এনে দেবে জাতিকে। বিভক্তি-বিভেদ ভুলে এগিয়ে নেবে অগ্রগতির পথে।