করোনা মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষমতা আছে: প্রধানমন্ত্রী

7
Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ধর্ষণকে বিশ্বব্যাপী সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে ভুক্তভোগী নারীর পাশে পুরুষ সমাজকেও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নারী ধর্ষণ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। ধর্ষণ প্রতিরোধে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এই নারী ধর্ষণকারী তো পুরুষরাই। কাজেই পুরুষ সমাজের পক্ষ থেকে আমরা চাই যে তাদেরকেও সোচ্চার হতে হবে।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রবিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার যারা করে তাদের ‘পশুরও অধম’ আখ্যা দিয়ে বলেন, যারা নারীদের ওপর এ ধরনের পাশবিক অত্যাচার করে, তারা সমাজে সব থেকে জঘন্য। তাদের মানুষ বলতে ইচ্ছে করে না, বলতে ইচ্ছে করে এরা পশুর চেয়েও অধম। এদের বিরুদ্ধে পুরুষ সমাজকেও ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীরা সব সময় নানা ধরনের যন্ত্রণার শিকার হয়, সেটা আমরা দেখেছি। সেটা মোকাবেলা করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছি। আমরা সেভাবে বিভিন্ন আইনও করেছি। আইনগতভাবে আমরা বিভিন্ন শাস্তিরও ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, নারীরা যত শিক্ষিত হবে সমাজ তত দ্রুত এগোবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্ধেক অংশকে অকেজো রেখে সমাজ সঠিকভাবে চলতে পারে না।

করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তিনি বলেন, আরেকটি সমস্যা এখন বিশ্বব্যাপী, করোনাভাইরাস। আমরা কিন্তু সারাক্ষণ মনিটর করছি। কোথাও যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রত্যেকে যদি এ ব্যাপারে একটু সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন এবং সেভাবে মেনে চলতে পারেন ইনশাল্লাহ এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। আমরা তা পারব। কাজেই এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।

করোনাভাইরাস নিজেকে মুক্ত রাখতে সবাইকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমি বলব সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে। এছাড়া প্রতিদিনই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে কীভাবে চলতে হবে, কীভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি। করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের অর্ধেক অংশই হচ্ছে নারী। সমাজের এই অর্ধেক অংশকে একেবারে অকেজো রেখে দিয়ে একটি সমাজ সঠিকভাবে চলতে পারে না, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। একটা কথা আমরা বিশ্বাস করি, নারীরা যত শিক্ষিত হবে, নারীরা যত স্বাবলম্বী হবে, সেই সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। নারী দিবসে বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে নারীরা লেখাপড়া শিখেছি, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি। কিন্তু আমাদের যিনি এই পথ দেখিয়েছিলেন সেই বেগম রোকেয়ার কথা স্মরণ করি। কারণ তিনি আমাদেরকে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে না দিলে হয়ত নারী সমাজ এই সুবিধাটা পেত না।

‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’ শীর্ষক এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নিয়ে সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইউএন উইমেনের এদেশীয় প্রতিনিধি এবং ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়ক শোকো ইশিকাওয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘জয়িতা পদকে’ ভূষিত সফল পাঁচ নারীর হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন- আনোয়ারা বেগম, ডাঃ সুপর্ণা দে সিম্পু, মরহুম মমতাজ বেগম, আরনিকা মেহেরিন ঋতু এবং সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালোরি এ্যান টেইলর। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও নারী উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র পরিবেশিত হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশী কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার প্রধানসহ বিভিন্ন নারী নেতৃবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।