জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ: তারা জীবণ সংগ্রামের দুরন্ত নারী সৈনিক

7
Spread the love

রশীদ হারুন

সরকারের অন্যতম একটি মহতি উদ্যোগ ‘জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ’শীর্ষক কার্যক্রম। যার মাধ্যমে তৃণমূলের সংগ্রামী নারীদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবন যুদ্ধে জয়ী নারীদের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর  এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ৫টি ক্যাটাগরীতে বিভাগীয় পর্যায়ে ৫জন শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হন। আর ৫জন রানার্স আপ হয়েছেন। এরা জীবন সংগ্রামের দুরন্ত নারী সৈনিক। তারা জানান তাদের সফলতার কথা। সারকারি ভাবে এরা আজ সম্মানীত হয়েছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি।

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্র জানান, ফুলতলার পয়গ্রম কসবার জাহানারা বেগম ক্যাটাগরী: অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী। ছোটবেলায় মা মারা যাবার কারণে জাহানারা বেগম সৎমার কাছে বেড়ে উঠেন। পরিবারের বড় সন্তান হবার কারনে পারিবারিক সকল কাজ তাকেই করতে হতো যে কারনে লেখাপড়া করার কোন সুযোগ তার হয়নি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ৩ সন্তানের জনক বিপতœীক আব্দুল সলেমান  এর সাথে  তার বিয়ে হয়। অভাবের তাড়নায় মনিরামপুর থেকে আধামণ গুড় এনে স্বামীর বাড়ির গ্রামে খুচরা বিক্রি শুরু করেন। এছাড়াও এনজিও থেকে ঋণগ্রহণ করে ফুলতলা থেকে পাইকারী দরে  আটা ও চাল কিনে খুচরা দরে গ্রামে বিক্রি শুরু করেন। এভাবেই তিনি সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু যখন তার নিজের গর্ভে সন্তান আসে, তখনই শুরু হয় স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতন। তার নিজের গর্ভের সন্তানের সংখ্যা ২ জন । ১৯৯০ সালে স্বামীর বোনক্যান্সার ধরা পড়লে খুলনায় চিকিৎসা শুরু করেন। অর্থের অভাবে  শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা করাতে পারেননি।  ১৯৯৪ সালে স্বামী মারা যান। অভাবের তাড়নায় মেয়েটিকে  অল্প  বয়সে বিয়ে দেন। সতীনের দুই ছেলেকে তার খালারা নিয়ে যায়। শারীরিক,মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েও তিনি ভেঙে না পড়ে দায়িত্ব নিয়ে সংসারের জন্য উপার্জন শুরু করেন। শুরু করেন ধান ছাটাই এর কাজ। একজন নারী হিসেবে পারিবারিক ও সামাজিক বাঁধা উপো করে তিনি ুদ্র ব্যবসার কাজে হাত দেন। চাতাল থেকে চাল এনে গ্রামে বিক্রি  শুরু করলেন । সাথে সাথে হাস-মুরগী , গাভী ও ছাগল পালন করেন। এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পানের বরজ ও সবজি চাষ করেন। তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রশিণ গ্রহণ করে ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সহায়তায় বিভিন্ন প্রশিণ ও ঋণ নিয়ে লাভবান হয়েছেন।তার নিবিড় তত্ত্বাবধানে তিনি একে একে ৬টি  পানের বরজ, ১০টি গাভী, ৮টি ছাগল এবং ১টি মুরগীর খামার গড়ে তুলেছেন এবং তার অধীনে  প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। শাক-সবজি থেকে শুরু করে ফল-ফলালী সবই তার পানের বরজের পাশে হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তিনি বাজারে তা বিক্রি ও করেন। বর্তমানে তিনি সব ঋণ পরিশোধ করে   বসবাসের জন্য সেমিপাকা বাড়ি তৈরি সহ নতুন করে ৬ কাঠা ও জমি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তিনি সমাজে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী। একই এলাকার সৈয়দা নাহিদা হাবিবা ক্যাটাগরী: শিা ও চাকুরী েেত্র সাফল্য অর্জনকারী নারী। অতি স্বল্প আয়ের সরকারী চাকুরীজীবী বাবার সংসারে জন্ম নেয়া নাহিদা হাবিবার পড়াশোনা করতে হয়েছে অতি কষ্টে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে কখনো দাদাবাড়ি আবার কখনো নানাবাড়ি থেকে পড়াশোনা চালিয়েছেন। এ অবস্থায়ই অর্জন করেন প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি। টিউশন ফি দেবার সামর্থ না থাকায় সহপাঠীদের সহযোগিতা নিয়ে ৪ টি বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে স্টার মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হন। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার।  শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতিদিন নৌকা পার হয়ে কলেজে যেতেন। গর্ভের সন্তানের ৭ মাস বয়সেই কলেজে যাবার সময় নৌকায় পা পিছলে পড়ে  যান । এ অবস্থায় প্রায় ৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে সবগুলো পরীায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২য় বর্ষের পরীা শেষ হবার পরের দিনই বড় সন্তানের আগমন ঘটে পৃথিবীতে। এভাবেই সংগ্রাম করে সরকারী  বি,এল কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ২য় বিভাগে বি এ (অনার্স) এবং মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

৪ বছরের  দুরন্ত ছেলে এবং সংসার সামলিয়ে বিসিএস চাকরী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ২৫ তম বিসিএস পরীায় প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৬ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগদান করেন।  বিসিএস প্রশাসন একাডেমীতে ৪ মাস ও বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিণ কেন্দ্রে সফলভাবে প্রশিণ শেষ করে ৪২তম বুনিয়াদী প্রশিণে মেয়েদের  মধ্যে প্রথম এবং সম্মিলিত মেধায় ৫ম স্থান অর্জন করেন। রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর’ও ল্যান্ড একুইজিশন অফিসার’ হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বগুড়ায় কর্মকালীন ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে সফলভাবে ভূমি রাজস্ব আদায়, ভূমি মালিকদের কাছে দুর্নীতিমুক্তভাবে তি পূরনের চেক প্রদান বহুমুখী দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন। ২০০৯ সালে ভূমি আইন ও ভূমির সার্বিক ব্যবস্থাপনা কোর্সে ১ম স্থান অর্জন করে ডাইরেক্টর এওয়ার্ড অর্জন করেন। ২০১৩ সালে ১২ তম প্রশিনে অংশগ্রহন করে প্রথম স্থান অর্জন করেন।  দেশে বসেই তিনি বৃত্তি  লাভ করেন। গর্ভে ৪-৫ মাস বয়সী সন্তান নিয়ে বগুড়ার দু পচাঁচিয়ে এবং খুলনার ফুলতলা উপজেলায় মাঠ পর্যায়ের কাজ সমাপ্ত করে। মাত্র ১৮ দিন বয়সী ছোট সন্তানকে কোলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে কর্ম সম্পদান করেন। ২০১৪ সালে জাইকা কর্তৃক নির্বচিত হয়ে জাপানে প্রশিণে অংশগ্রহণ এবং ১১টি দেশের অংশগ্রহণ কারীর মধ্যে হতে ‘ ব্যবসায়ীদের সাথে ডায়লগ’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার জন্য নির্বাচিত হন। প্রশাসনিক েেত্র উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ উজ্জীবিত বাংলাদেশ কর্তৃক “কর্মবীর ইউএনও” সম্মাননা স্মারক অর্জন করেন। ২০১৬ সালে সরাইল, ব্রাণবাড়িয়ায় ২০তম ও ১ম নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সহ প্রাথমিক শিা েেত্র ‘ই মনিটরিং’ শিার্থী উপস্থিতি’ , মিড  ডে মিল কার্যক্রম, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শুদ্ধস্বরে জাতীয় সঙ্গীত চর্চা প্রভৃতি কারণে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার নিকট হতে “ জাতীয় প্রাথমিক শিা পদক ২০১৬” গ্রহণ করেন। উদ্ভাবনের অবদান স্বরূপ সরাইল উপজেলা শ্রেয়তর উপজেলা’ হিসেবে “উদ্ভাবনী উৎসাহিকরণ সম্মাননা-২০১৬’ অর্জন  করেন। ২০১৮ সালে অষ্ট্রেলিয়ার সফলতার সাথে কোর্সে সম্পন্ন করে সনদ  প্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি  সরকারের  উপসচিব পদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত রয়েছেন।

বাগেরহাটের মোলাহাট উপজেলার মমতাজ বেগম ক্যাটাগরী  :   সফল জননী নারী মাত্র ১৩ বছর বয়সে মমতাজ বেগমের বিয়ে হয় খাদ্য কর্মকর্তা  খন্দকার মো: মাহবুবুর রহমানের সাথে। প্রচন্ড মানবিকতা সম্পন্ন ও শিানুরাগী  মানুষটির  আকষ্মিক মৃত্যুতে তাদের ১৬ বছরের সংসারের ইতি ঘটে। মমতাজ বেগমের বয়স তখন মাত্র ২৯ বছর। তার সন্তানদের বয়সছিল ৭ বছর, ৪বছর এবং ৬ মাস । শুরু হয় নতুন জীবন সংগ্রাম। খুলনার সরকারী আবাসিক কোয়াটার ছেড়ে শশুর বাড়িতে গ্রামে ৩ সন্তানসহ বসবাস শুরু করেন। তিন সন্তানের লেখাপড়াসহ সমস্ত সংসারের দায়িত্ব নিজের কাধেঁ তুলে নেন ও স্বামীর অল্প জমি বর্গা দিয়ে কখনো হারি পেতেন, কখনো পেতেন না। এভাবেই অতি কষ্টে সৃষ্টে দুর্বিসহ জীবন যাপন করেছেন। সাধারণ পোষাকে, স্বল্প খাবারে, সন্তানদের মানুষ করেছেন। সারাদিনের কাজ শেরে সন্তানদের সাথে জেগে তাদের পড়াশুনায় সঙ্গ দিয়েছেন। সন্তানেরা বৃত্তি পেয়েই তাদের পড়াশুনার খরচ জোগাড় করেতো। অর্থাভাবে তাদেরকে বিদ্যালয়ের পোষাক কিনে দেবার সুযোগ কখনো হয়নি। এভাবেই নিজে সারাটি জীবন সংগ্রাম করে সন্তানদের পড়াশুনা চালিয়েছেন। তাদেরকে কাঙ্খিত স্থানে পৌছেঁ দেবার চেষ্টা করেছেন।

১ম সন্তান কে,এম, আলী আজম খুলনা সরকারী বি এল কলেজ হতে অর্থনীতিতে অনার্স এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করেন। যিনি  ৮ম বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারে ৭ম স্থান অধিকার করে চাকুরীতে যোগদান করেন। বর্তমানে   শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। ২য় সন্তান মেয়ে  যার এস,এস,সি পাশের পরই আর্থিক সংকটের কারনে বিয়ে হয়ে যায়। ৩য় সন্তান শফিউল আজম, বি,এ(অনার্স) এমএ  সরকারী বি,এল, কলেজ খুলনা। তিনি ১৯৯৩ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মনোনীত হবার পর যখন তার এই ডকুমেন্টারী  তৈরীর কাজ চলছিলো তখন তারও মৃত্যৃ সংবাদ জানা যায়।

যশোর জেলার মনিরামপুরে মোসাম্মদ আয়শা ক্যাটাগরী:নির্যাতনের  বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী। বাবা মার বড় সন্তান ছিলেন আয়শা । তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্বেও দরিদ্র বাবার ঘরে পড়াশুনা করতে পারেননি তিনি। ১২ বছর বয়সে বিয়ে এবং ১৪ বছর বয়সে কন্যা সন্তানের জননী হন। ৩৪ বছর বয়সে  ৩ কন্যা সন্তানের  মা। সংসারের অভাব অনাটনের কারনে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান পরিবারের স্বচ্ছলতা আনায়নের জন্য। সেখানে তিনি পাচারকারীদের কবলে পড়েন। কয়েকদিন পর নিজেকে আবিষ্কার করেন এক অন্ধকার পরিত্যাক্ত টয়লেটে।  আট দিন সেখানে কাটানোর পর কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে এসে পুলিশের সহায়তায় আশ্রয় মেলে “নির্ভয়া” নামক এক আশ্রমে। আশ্রমের লোকদের সহায়তায় তিনি স্বামীর সাথে যোগাযোগ করেন। দীর্ঘ ৫ মাস পর স্বামী তাকে না নিয়ে একাই দেশে ফেরেন। আয়শার মানসিক অবস্থা তখন আরো করুন হয়ে পড়ে। তিনি হারপিক খেয়ে আতœহত্যা চেষ্টা করেন। বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশিত হবার পর   একটি বেসরকারি সংগঠনের নজরে আসে। এ সময় তিনি তাদের সহযোগিতায় এবং অনুপ্রেরণায় হাতের আঙ্গুলেই রং মাখিয়ে জীবনের  প্রথম ছবিটি আকেঁন। এভাবে মাত্র কয়েকদিনে তিনি  ২৪ টি ছবি   আকেঁন । আশ্রমে থাকাকালীন ডায়েরীতে ১৮টি কবিতা, ১টি গল্প এবং আয়শার চিত্রকর্ম নিয়ে মালয়লাম ভাষায় প্রকাশিত হয় তার বই “ আহত আমি’’। কেরালার কোজিকোট আর্ট গ্যালারীতে  ছয় দিন ব্যাপী তার একক চিত্র প্রদর্শনীতে  আয় হয় ৯ লাখ বাংলাদেশী টাকা এবং চার হাজার কপি বই বিক্রি হয়। অবশেষে কোজিকোটের জেলা প্রশাসকের সহায়তায় দেশে ফিরে আসতে সম হন। দেশে ফিরলেও পাচার ও নির্যাতিতা হবার কারনে সামাজিক চাপে ঘর থেকে বের হতে পারতেন না আয়শা। এ সময়ই একটি জাতীয় দৈনিকের সিনিয়র রিপোর্টার ও সম্পাদক’র সহযোগিতায় আয়শার “ আহত আমি’’ বইটি বাংলায় প্রকাশিত হয় । এ সময়ই আমেরিকান রাস্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকোটের সাথে আয়েশার পরিচয় ঘটে। তিনি আয়েশাকে নিয়ে চ্যানেল ২৪ এ টকশো, আমেরিকান সেন্টারে ও ঢাকা জাতীয় জাদুঘরে আয়শার একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।

পরবর্তীতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি, পরীা দেন। আয়শা তার অদম্য পরিশ্রমে গড়ে তোলেন “জেগে উঠো মহিলা উন্নয়ন সংস্থা”। নিজের মনকে সেই নির্যাতনের কবল থেকে মুক্ত করে আবিষ্কার করেন নিজের ভেতরের এক গুপ্ত সৃজনশীল প্রতিভা। তিনি একজন কবি, লেখিকা ও চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরে নিজের যোগ্যতায় নির্যাতনের কালিমা মুছে স্বামী সন্তানের কাছে ফিরে আসতে সমর্থ হন।

বর্তমানে তিনি চিত্রশিল্পী, লেখিকা ও একজন সফল সংগঠক হিসেবে স্বামী, পরিবার এবং বহু শুভাকাঙ্খীদের সাথে দিন কাটাচ্ছেন।

বাগেরহাট পৌরসভার আম্বিয়া খাতুন ক্যাটাগরী – সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী। দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় আম্বিয়া খাতুনের বিয়ে হয় । স্বামী ছিলেন সংসারের প্রতি উদাসিন। বিয়ের নয় বছরে তাদের ঘরে জন্ম নেয় ৩ টি পুত্র সন্তান। পারিবারিক জীবন খুব সুখকর না হওয়ায় তিনি বাগেরহাট ভোকেশনাল কারিগরী স্কুল থেকে কাটিং, এমব্রয়ডারী ও উলের কাজ শেখেন। ১৯৭৯ সালে বাগেরহাট জেলার একমাত্র মহিলা সংগঠনের সদস্য হিসেবে দু:স্থ নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিণ দিতেন। ১৯৮০ সালে তিনি প্রভাতী শিশু বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে জায়গার অভাবে স্কুলটি পরিচালনা করা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

১৯৮৩ সালে নারী পরে সম্মেলনে  দুর্বার নেটওয়ার্ক গঠনের আওতায় নারী নির্যাতন বিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে থাকেন। সংগঠনের সহায়তায় বিভিন্ন ধরণের নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, যৌতুক, এসিড নিপে,ধর্ষণ, পাচার, সংখ্যালঘু নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের নের্তৃত্ব দেন।

চাঞ্চল্যকর নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মাসুমা আক্তারের ধর্ষণজনিত মৃত্যুর মামলা, জাহানারার ধর্ষণ মামলা,এসিড নিপেজনিত যাত্রাপুরের নাসিমা বেগম ও ফকিরহাটের আইরীন মামলার বিচারের েেত্র নেপথ্যে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে বানিশান্তা নিষিদ্ধ পল্লী থেকে কোষ্টগার্ডের সহায়তায় ৫টি মেয়েকে উদ্ধার করে অভিভাবকদের পৌছেঁ দিয়েছেন তিনি।

সংখ্যালঘু নারী ছবি রানী মন্ডল, রেখা রানী ও অর্চনা মিত্রকে ন্যায়বিচার পেতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নারী নেতৃত্ব বিকাশে রূপান্তর, নারী প থেকে তিনি বিভিন্ন সময়ে শ্রীলঙ্কা,সাউথ আফ্রিকা,ভারত এবং পাকিস্তান ভ্রমণ করেন। দুঃস্থ মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য অগ্রযাত্রা মহিলা উন্নয়ন সমিতি গঠন করেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে ত্রাণ বিতরণ, জেলখানায় অবস্থানরত অসহায় মহিলা কয়েদিদের আইনি সহযোগিতা প্রদান, মানব পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ সড়কের দাবীত, এলাকা ধুমপান মুক্ত করণ সহ বহুমুখী সামাজিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন।

বাল্য বিবাহ বন্ধ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ল্েয তিনি সক্রিয়ভাবে নিয়মিত ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীদের ছাত্রীদের সাথে মতবিনিময় ও শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন। সমাজের এমন কাজ করার জন্যে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা ও  পেয়েছেন। বর্তমাে  তিনি বিভিন্ন সেবা মূলক কাজ করে সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন।

বিভাগের ১০ জেলায় ৪০জন জায়তাকেও সম্মাননা দেয়া হয়। আগামী ৮ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফাতেমা জামিন বলেন, বর্তমান সরকার নারী বান্ধব সরকার। নারী উন্নয়নের স্বীকৃতি তাদের এ সম্মননান।