প্রতিবন্ধি স্কুল পরিচালনার অন্তরালে দাকোপে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

104
Spread the love

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি

খুলনার দাকোপের বাজুয়ায় অনুমোদনহীন প্রতিবন্ধি স্কুল পরিচালনার অন্তরালে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। “শেখ হাসিনা” নাকি “বাজুয়া” প্রতিবন্ধি স্কুল। আলোচিত ওই স্কুলের নাম নিয়ে জনসাধারণ রয়েছে ধোয়াশার মাঝে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নিজে ভুমি দাতা, সভাপতি, পরিচালক এবং প্রধান শিক্ষক সেজে উপজেলার বাজুয়ার চড়ারধার এলাকায় এবছরের গত জানুয়ারী মাসে প্রতিবন্ধি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন একই এলাকার সজল গাইন। এখানে ১ম থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ানো হয়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠায় নেই শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কোন অনুমোদন। নেই কোন পরিচালনা কমিটি ও নিবন্ধন। স্কুলের বেড়ায় টানানো ব্যানারে লেখা শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। আবার স্কুলের প্রবেশদ্বারে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে টানানো প্যানায় লেখা বাজুয়া প্রতিবন্ধি বিদ্যালয়। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষার নামে কথিত সজল গড়ে তুলেছেন দূর্ণীতি অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিনব কারখানা। অতীতের নানা কারনে এলাকায় বহুলালোচীত এই সজল। জানা গেছে ২০১৯ সালের ১২ জুন খুলনার একটি স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক কর্মচারী বিভিন্ন পদে দরখস্ত আহবান করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঢাকা লালমাটিয়া প্রতিবন্ধি সোসাইটি বিদ্যালয়ের নিবন্ধন নাম্বার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া স্থানীয় অপর একটি স্কুলের জনৈক প্রধান শিক্ষকের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে প্রতিটি দরখস্তের বিপরীতে ৫ শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা পে অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাপট চাওয়া হয়। এভাবে কয়েক শ’ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় লক্ষাধীক টাকা। স্থানীয় কলেজের দুই শিক্ষককের মাধ্যমে নেওয়া হয় বিতর্কিত নিয়োগ পরিক্ষা। যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিক্ষক এবং পরিক্ষা পদ্ধতি কোনটাই আইনসিদ্ধ ছিলোনা। আবার সেই পরিক্ষার কোন ফলাফল ঘোষনা না দিয়ে জনপ্রতি পদ অনুসারে ৩ থেকে ৬ লক্ষ করে টাকা নিয়ে ১১ জন শিক্ষকসহ কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। জানা গেছে প্রধান শিক্ষক সজলের স্ত্রী, শ্যালকও আছে ওই তালিকার মধ্যে। সজল গাইন ইতিপূর্বে জাল সনদে বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষক হিসাবে চাকুরী করতে গিয়ে ধরা পড়ে চাকুরীচ্যুত হয়।

এব্যাপারে বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার মন্ডল বলেন আপনিতো সবই জেনেছেন আমি আর কোন মন্তব্য করতে চাইনা। বর্তমানে বিদ্যালয় শতাধীক শিক্ষার্থী আছে দাবী করে সজল গাইন বলেন ১২ জন শিক্ষক ও ৪ জন ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর সমন্বয়ে স্কুলটি পরিচালনা করছি। উক্ত দূর্ণীতি অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিলা এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। সকল বিষয়ে তিনি জানেন পারলে তার কাছ থেকে জেনে নিবেন। তাছাড়া নিজেকে স্থানীয় ওয়ার্ড আ‘লীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে বলেন আমি আপনাকে কোন তথ্য দিবোনা, এখানে হাবলা পাড়ায় নোট ভাঙ্গানো যাবেনা।

এবিষয়ে মহিলা এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার জানান আমি জানি অনেকেই আমার নাম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে। কেউ যদি অপকর্ম করে তার সাথে আমি নেই এটা স্পষ্ট কথা। আমাকে ওই স্কুলের সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিলে আমি বলেছি স্কুলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হলে রাজি আছি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। তারা আমাকে ওই স্কুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি বলেছি সকল কাজ স্বচ্ছতার সাথে করে এলাকার সুধী সমাজকে সাথে নিয়ে আমি স্কুলে যাবো। এর বাইরে আমি কিছু জানিনা।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম বলেন প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিধান অনুযায়ী এমন কোন বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্ব প্রথম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের জানার কথা। কিন্তু বাজুয়ার প্রতিবন্ধি স্কুলের বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। আইনতভাবে আমি বা আমার দপ্তর এ বিষয়ে কিছু জানেনা। তবে ওই দপ্তরের একটি সুত্র জানায় ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক যারা নাকি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন তারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে নিজেদের বেতন ভাতার বিষয়ে জানতে এসে বাস্তব তথ্য জেনে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।

শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে পুঁজি করে দূর্ণীতি অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এর সাথে আর কোন কোন রাঘব বোয়াল জড়িত আছে। বর্তমান সরকার যেখানে নিজ দলের প্রভাবশালীদের দূণীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছেন সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে প্রতিবন্ধি স্কুল পরিচালনার নামে অর্থ বাণিজ্যের এই অভিযোগের সঠিক তদন্ত এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।