জুয়া খেলা বন্ধের পূর্ণাঙ্গ রায়ে কোরআনের রেফারেন্স

8
Spread the love

ঢাকা অফিস

রাজধানী ঢাকার অভিজাত ১৩টি কাবসহ সারাদেশে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে জুয়া খেলা নিয়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে যে বিধিনিষেধ আলোচিত হয়েছে তা রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা আল বাকারাহ’র ২১৯ এবং মায়েদার ৯০ ও ৯১ নম্বর আয়াত রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে টাকা ছাড়া শুধু বিনোদনের উদ্দেশ্যে জুয়া খেলা যাবে বলে রায়ে উল্লেখ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রায় প্রদানকারী হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের স্বাক্ষরের পর ২৫ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

২৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, আইনের চোখে সবাই সমান। যদিও কাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের সদস্যরা চিত্ত-বিনোদনের উদ্দেশ্যে এই খেলা খেলেন। তাদের সদস্যদের পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও তারা সমাজের দরিদ্র শ্রেণি থেকে ভিন্ন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে না বলে রায়ে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার অভিজাত ১৩টি কাবসহ সারাদেশে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। টাকা বা অন্য কিছুর বিনিময়ে তাস, ডাইস, হাউজি খেলাসহ সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতেও বহাল রাখেন।

যে ১৩টি কাব বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা হলো-ঢাকা কাব, উত্তরা কাব, গুলশান কাব, ধানমন্ডি কাব, বনানী কাব, অফিসার্স কাব, ঢাকা লেডিস কাব, ক্যাডেট কলেজ কাব, চিটাগাং কাব, চিটাগাং সিনিয়রস কাব, নারায়ণগঞ্জ কাব, সিলেট কাব ও খুলনা কাব। এর আগে ঢাকা কাবসহ দেশের ১৩টি অভিজাত কাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সামিউল হক ও অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন মো. ফারুকের জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা কাবসহ দেশের ১৩টি কাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। রুলে জুয়া জাতীয় অবৈধ ইনডোর গেম যেমন- কার্ড, ডাইস ও হাউজি খেলা অথবা এমন কোনো খেলা যাতে টাকা বা অন্য কোনো বিনিময় হয় তা বন্ধের নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না-তা জানতে চানতে চাওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার ঢাকা, খুলনা ও সিলেট এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৮ এবং পাবলিক গেম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭ অনুযায়ী কোনো প্রকার জুয়া খেলা দ-নীয় অপরাধ। একই সঙ্গে সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারকে পতিতাবৃত্তি ও জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা কাবসহ দেশের ১৩টি কাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বন্ধে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। পরে ওই দিন রায় ঘোষণার জন্য ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দিন ধার্য করেন। পরে রায়ের দিন পিছিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি (রোববার) ধার্য করেন হাইকোর্ট। পরে ১০ ফেব্রুয়ারি রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।