স্টাফ রিপোর্টার
লোকসানের কবলে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিল। গত পাঁচ বছরে এই ৯টি জুট মিলে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। মূলত সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভাব, অব্যবস্থাপনা, সময়মতো কাঁচামাল কিনতে না পারা, উত্পাদনের কাজে অদক্ষ শ্রমিকের ব্যবহার ও শ্রমিক অসন্তোষ এবং দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো মেশিনারিজ ব্যবহারের কারণে জুট মিলগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উত্পাদন হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, গত শতকের ৫০-এর দশকে খুলনা মহানগরীর ভৈরব নদের তীরে প্রথম জুট মিল স্থাপিত হয়। এর পর লাভজনক হওয়ায় একের পর এক গড়ে ওঠে রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল। বর্তমানে দেশে বিজেএমসি নিয়ন্ত্রিত জুট মিল রয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে তিনটি নন-জুট মিলসহ চালু রয়েছে ২৬টি জুট মিল। এই ২৬টি জুট মিলের মধ্যে ৯টি জুট মিলই খুলনা অঞ্চলে অবস্থিত।
বিজেএমসি খুলনা আঞ্চলিক অফিস সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিলে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে আলীম জুট মিল ৭১ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, কার্পেটিং জুট মিল ৪৫ কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ক্রিসেন্ট জুট মিল ৪৬৬ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার টাকা, দৌলতপুর জুট মিল ৩৭ কোটি ৫১ লাখ ৯২ হাজার টাকা, ইস্টার্ন জুট মিল ৮৯ কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা, জেজেআই জুট মিল ১৩০ কোটি ৮১ হাজার টাকা, খালিশপুর জুট মিল ১১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার টাকা, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল ৩১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও স্টার জুট মিল ১৯৭ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছে। ধারাবাহিকভাবে মিলগুলোতে এই লোকসান অব্যাহত রয়েছে।
প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাহিদামতো কাঁচা পাট সরবরাহ না করার কারণে মিলগুলোতে লোকসান হচ্ছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, বিজেএমসি পাট কেনার মৌসুম শেষে ১ হাজার ২০০ টাকা মণের কাঁচা পাট কেনে ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে। সময়ের পাট অসময়ে কিনতে গিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়। বিজেএমসির খুলনা অঞ্চলের সমন্বয়ক (লিয়াজোঁ কর্মকর্তা) মো. বনিজউদ্দীন মিঞা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ঠিকমতো চালু রাখতে হলে প্রথমেই পাটকলগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান করাসহ পাট ক্রয় মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পাট ক্রয় এবং যেখানে-যেখানে যে ধরনের দক্ষ লোকের প্রয়োজন, তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া জরুরি। এছাড়া শ্রমিকদের সময়ভিত্তিক মজুরি বাতিল করে পিচরেট (কাজ না করলে কোনো মজুরি পাবে না) ভিত্তিতে মজুরি প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছর আগের পুরোনো মেশিনারিজের পরিবর্তে চতুর্থ জেনারেশনের মেশিনারিজ দিয়ে মিলগুলো চালানো গেলে মিলগুলো অবশ্যই লাভজনক করা সম্ভব হবে।